ফারুক ওয়াসিফ
আসসালামু আলাইকুম। সবাইকে শুভেচ্ছা। আমরা এখানে এসে আজকে যে ঘ্রাণটা সে ঘ্রাণটা অন্য কোথাও পাবেন না। এটা যারা ছোটবেলায় সিনেমা হলে গেছে মফস্বলে এবং রেয়ার স্টলে বসছে এবং এরকম ভাবে তাকিয়ে সিনেমা দেখতে হতো ঠিক এটা সেই ঘ্রাণ। এবং এটা বিপ্লবের ঘ্রাণ। এটা মানুষের ঘ্রাণ। এবং এইটা হচ্ছে সেই সময় যখন প্রত্যেকটা আলোচনা সভা দাঁড়াচ্ছে পার্লামেন্টের মতো। এখানে আমরা আমাদের রাষ্ট্র কি হবে? আমরা কিভাবে রোল প্লে করবো? ফলে এটা ছোট ছোট পার্লামেন্ট। এটা আসলে জনগণের সার্বভৌম। মানুষ মুক্ত হলে কি করে? তো সেটা কেবল শুরু। আমরা আসলে যে মুক্তিটা দেখেছি সেটা আসলে শুরু এবং এটা কতদূর পর্যন্ত নেয়া যায় সেটা আমরা জানিনা। অনেক বাধা আছে। কিন্তু এ শুরুটা যদি আমরা আনন্দটা পাই, স্বাদটা পাই, সংগ্রামটা বুঝি, তাহলে আর কত দূর আমাদের পক্ষে যাওয়া যায় সেটার একটা নিশানা আমরা খুঁজে পাবো।
আমি এখানে আলোচনাটা- আমার রাজনৈতিক আলোচনাটা দুইটা ভাগে ভাগ করে সংক্ষেপে দশ দশ করে বা সাত সাত মিনিট করে এ আলোচনা শেষ করে দেব। সেটা হচ্ছে যে, এই যে, ঘটনাগুলো এটা অবশ্যই আমাদের বর্তমান ঘটনা যেটা জুলাই অগাস্টের, গণঅভ্যুত্থান। যার পিছনে হয়তো যেটা হয়তো বর্শার ফলার মতো বলি আমি। এটা দীর্ঘ এ বর্শার দ্বন্দ্ব রয়েছে। যেটা গত পনেরো বছর ধরে তিলে তিলে তৈরি করতে হয়েছে। এবং কি করতে হয়েছে, যে সরকার যে শাসন করতো তার বৈধতা আছে কি নাই, এটা যে অবৈধ, এটা বৈধতা আছে কি নাই এটা যে অবৈধ, এটা অজস্রভাবে লিখে লিখে, বলে বলে দেখিয়ে দিতে হয়েছে।
এই সরকারের যে উন্নয়ন, এ উন্নয়নটা চোখে ধূলি দেওয়ার মতো, উন্নয়ন নামক দর্শন আসলে। সে রাজনীতি, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আইন, অধিকার, সব কিছুকে ঠেকিয়ে দিয়েছে, একটা উন্নয়নের একটা দাপট দিয়ে। এবং সে উন্নয়নটা আমরা দেখেছি, প্রতিযোগিতার উন্নয়নে। মানে, কয়েকটা কোম্পানী এখানে শুধু ব্যবসা করবে আর কেউ একচেটিয়ে ব্যবসা করতে পারবেনা। আর কেউ এখানে কিছু করতে পারবেনা। একটা দেশই দেশে শুধুমাত্র ব্যবসা এবং আধিপত্য করতে পারবে। আর কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারবোনা। তাহলে, এটা হচ্ছে, এইযে, একচেটিয়ে রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যা লুটপাতের উপর দাঁড়ানো। এবং যা মতাদর্শগত জায়াগাটাকে সে ঢেকে দিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ এবং উন্নয়ন এই কথা বলে, সেই পুরাটাই মিলেই ফ্যাসিবাদ। ফলে, জুলাই আগস্টে যা ভেঙ্গে পড়েছে, সে তার এ ক্ষমতা, তার এ মতাদর্শ, তার যে দল সংগঠন এবং তার যে বৈধতা; পুরা এক সাথে ভেঙ্গে পড়েছে। কিন্তু কেউ তো এরকম করে স্লোগান, ঐরকম করে মিছিল নিয়ে আসে নাই, যে পথ ধরে ধরে যে আমরা বাহাত্তরের সংবিধান চাইনা, যে এটা চাই। এভাবে কাউকে বলতে হয় নাই। কারণ, এ কাজটা গত পনেরো বছরে একভাবে করা হয়ে গেছিলো। ফলে, সবকিছুই রেডি ছিলো যে, এ অবৈধ, এ ভূল, এ মানুষের শত্রু, এ জাতীয় শত্রু, জাতীয় বেঈমান। কিন্তু এ ঘটনাগুলো কারা করছে? কোন শ্রেণী করছে? আমরা তো খুঁজছি, কে নায়ক, কে নেতা, কে চিন্তাবিদ, কে সংগঠনটাকে তৈরি করেছে, এটা অবশ্যই জরুরি। কিন্তু যে, ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে এই নেতৃত্ব এবং এ চিন্তা, এ অভ্যুত্থান গঠিত হয়েছে তা অনেক পুরানা।
আমি তিনটা মোমেন্টের কথা বলবো, যেমন, আমরা আজকে এটা প্রথম আমি নিজে খেয়াল করলাম, দু হাজার পনেরো সালের যে নো ভ্যাট আন্দোলন হলো, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর। তো, আমি কলাম লিখি, সাংবাদিক, আমি বুঝতেছি যেয়ে আমি গেলাম, আমার নিজের ধারণাটা বদলালো, যে এখানে, আমরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বলতে আমরা যা বুঝি, সেটা আসলে ঠিক আমাদের জানা ছিলনা। এরা সেই উঠতি মধ্যবিত্ত, গ্রাম মফস্বলের প্রথম জেনারেশন শহরে আসছে। তার বাবা হয়তো কৃষক, তার বাবা হয়তো প্রবাসে শ্রমিক অথবা গ্রামে ছোট দোকান আছে অথবা হাটে গঞ্জে হয়তো একটা কাপড়ের ব্যবসা, বা মাঝারি ব্যবসা। এটাই হচ্ছে নতুন বাংলাদেশ। আমরা দেখেছি, প্রথম যুগের যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সেটা ছিল একটা বনেদী মধ্যবিত্তের জায়গা। যেমন, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী বা এই এলাকায় যে বনেদী মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত থাকে, তারা। তারা একটা ভূল করলেন দু হাজার ছয় আটে। তারা মনে করলেন, বিএনপি খারাপ। ফলে আমরা একটা ভাল স্বৈরাচার চাই। ফলে, তারা এক এগারো সরকারকে সাপোর্ট দিলেন। তাদের যে সুশীল সমাজ তাদের যে থিক ট্যাংক, তারা এভাবে আমাদের ঠেলে নিয়ে গেলেন যেনো, হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো যে বিএনপি ঠেকাতে হলে, আমাদের আপাতত গণতন্ত্র বিসর্জন দিতে হবে। ঐ যুক্তি দাড় করে। দুই হাজার তে উন্নয়নের স্বার্থে, আমাদেও গণতন্ত্র বিসর্জন দিতে হবে। তারপর আসলো, মুক্তিযুদ্ধের স্বার্থে আমাদের গণতন্ত্র বিসর্জন দিতে হবে। কেননা, গণতন্ত্র এসে গেলে, বিএনপি এসে যাবে, জামাত এসে যাবে। এরা এসে যাবে। প্রত্যেকটা লজিকগুলো ছিল কিন্তু একটা জায়গায় যে লজিকগুলো কিন্তু আজকে আবার ফেরত আসছে। যে আমি আবার পরে আসবো। আমরা প্রয়োজনে.. আওয়ামীলীগ তো গেল। এখন মাইনাস টুর বাকি অংশ শেষ করতে হবে। ঐ যে, ইয়ের একটা সুকুমারের ছড়া আছে, ছাগল, এক ছাগল তার বড় দাদার কথা বলছে। আমার বড় দাদার অর্ধেকটা তার ঐ বাঘে খেয়ে ফেললো। বাকি অর্ধেকটা সেই দুঃখে মারা গেল। এখন বিএনপিকে খেতে গিয়ে বাকি অর্ধেকটুকু মাইনাস টুর বাকি অংশ আওয়ামীলীগ নিজে আত্মহত্যা করলো। নিজেকে ধ্বংস করলো, গণতন্ত্র ধ্বংস করলো, বাংলাদেশ ধ্বংশ করলো এবং তার নিজের রাজনৈতিক মৃত্যুটা সে ঘটিয়ে ফেললো। ফলে, আজকে আমরা যখন বলি, যে, এখানে আমাদের একটা এই স্বৈরাচার খারাপ। কিন্তু আমাদের এমন এক ব্যবস্থা গড়তে হবে, অনেকে বলছেন, যে ড. ইউনুসকে প্রেসিডেন্ট বানাতে হবে। তখন আমার ঐ ভয়ের কথা মনে পড়ে, যে একটা কর্তৃত্ববাদকে সরিয়ে আমরা কি একটা ভাল কর্তৃত্ববাদকে যে লজিক দুই হাজার ছয়/ আটে আমরা ভুল করেছি সেই একই রকমের আলামত আবার দেখা যাচ্ছেনা তো।
দ্বিতীয়ত, আপনারা জানেন যে, ফরাসি বিপ্লবে, সেখানে প্রথম বিপ্লবে নব্বই দিন টিকে ছিলো, সতেরো শ, একানব্বই সালে। তার আট বছরের মাথায় নানান পালাবদলের পর নেপোলিয়ন একজন সৈনিক কসনিগান সৈনিক তিনি ইতালিয়ান এক দ্বীপে তার জন্ম। তিনি হয়ে গেলেন ফরাসি জাতীয়তাবাদের নেতা। যার জন্মই ইতালিতে/ ফরাসিতে না। যাই হোক সেটা আরেক কথা। ফরাসি রাজতন্ত্র কায়েম হলো, বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার ফলে। ফরাসি বিপ্লব তৃতীয়বার মাথা তুললো আঠারো আটচল্লিশ সালে। তখন এরকম আন্দোলন, সংগ্রাম হলো, নতুন যে একটা রাজতন্ত্র ছিলো সেটা উচ্ছেদ করা হলো। তখন দেখা গেল, যার সঙ্গে আজকের পরিস্থিতির একটা মিল আমার মনে হয় দেখা যায়। যে নতুন বিপ্লবী পরিস্থিতির পর কোনো একটা দল বাকি সব দলগুলোর উপর কোনো প্রাধান্য আনতে পারছেন না।মানে, প্রধান দল বলে কাউকে কেউ মানতে চাইছেনা। ফলে তারা তিন চারটা গ্রুপ তাদের ভেতর এমন কম্পিটিশন শুরু হলো, তার মধ্যে উদয় হলেন একজন শেয়ার মার্কেটের ফর দা ব্যবসায়ী। যার নাম লুই। তিনি নেপোলিয়নের ভাগিনা। এই ভাগিনা তার মামার নাম নিয়ে এই সুযোগে রাজনীতির দোকান খুললেন এবং তিনি এই যে চারপাঁচ প্রতিদ্বন্দ্বি গ্রুপ এদের কম্পিটিটেশনকে ব্যবহার করে। এদেরকে একজনের সাথে আরেকজনকে লাগিয়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত ডিক্রি ডিক্রি জারি করে নিজেকে সম্রাট হিসেবে ঘোষনা করলেন। এবং বিপ্লব দ্বিতীয়বার পরাস্ত হলো। এবং সে দ্বিতীয় বিপ্লব পরাজয়ে ছিল ইউরোপের ফ্যাসিবাদের প্রথম মহড়া। এবং যেটা পরবর্তীতে জার্মানীতে ফিরে এলো। তো, আজকে যখন আমরা বলছি যে, আমরা বিএনপি চাইনা, জামাত চাইনা, বাম চাইনা, ডান চাইনা ইত্যাদি চাইনা। তার মানে আমরা বলতে চাইছি, আমরা রাজনীতি চাইনা। আমরা এপোয়েন্টেট ব্যক্তি চাই। আমরা নির্বাসিত মানুষটাকে আমরা বিশ্বাস করতে চাইছিনা। তার মানে, আমরা আমাদের এজেন্সিতে বিশ্বাস করছিনা। নাগরিক হিসেবে আমি লোকটাকে নির্বাচন করবো। কারণ তার আগে ঐ বিশ্বাসগুলো তলিয়ে গেছিলো। এটা একটা ভয়ংকর ভুল কাজ হবে, এটা ড. ইউনুসের বা কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত সমস্যা না। তিনি এটা চানওনি। যারাই এ প্রস্তাবটা করছে তারা কিন্তু চুপ্পুকে সরায়ে আরেকজনকে আমরা বসাতেই পারি। যিনি এখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছেন, সেই গণদাবী আছে। আমি একটু কথাটা গম্ভীরভঙ্গিতে চলে গেলাম ডাকনাম বাদ দিয়ে। কারণ, আমরা তো মনে করিনা, তিনি আমাদের প্রেসিডেন্ট। ফলে, এটা যদি জনগণের পার্লামেন্ট হয় তাহলে এ দাবীটা কেন আমরা তুলছিনা জোরেশোরে। আমাদের নেতৃত্ব কেন তুলছেনা। এবং যতগুলো ফ্রাংকশন এই বিপ্লবে ছিল, দল ছিল, একথাগুলো কেন তুলছিনা। এ বিপদ কেন আমরা মাথায় বহন করবো এবং এ কলংক কেন আমরা রাষ্ট্রের কপালে তিলকের মতো টিপের মতো বসে থাকবে। ফলে, এইটা আমাদের করতে হবে। তার মানে এই না যে, ড. ইউনুসকে অমুককে অমুককে অমুককে। এইটা তার সাংবিধানিক পদ। তার কাজ তার ক্ষমতা লিমিটেড। মূল ক্ষমতাটা হবে এই জনগণের। আন্দোলনকারী শক্তির। প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের এবং প্রত্যেকটা নাগরিকের। এবং তাদের প্রতিফলন হিসেবে আমরা উপদেষ্টাদের কাছে দাবী দাওয়া নিয়ে যাবো, উপদেষ্টারা আমাদের সমাধান এনে দেবেন। তারা ত্রাতা, তারা ফেরেস্তা এটা না। তারা খারাপ সেটাও না। তাদের কাজের যে পদ্ধতি সে কাজের পদ্ধতি হচ্ছে, জনদাবীকে রিফ্লেকশনে আনা। এবং এতদিনের যে সমস্যা সেটা ইতোমধ্যেই চিহিৃত। সেটা দুর করা। প্রেসক্রিপশনই দেয়া, শুধু তাদের এ সাপোর্টটা দিয়ে যাওয়া। এবং গতিটা বেগবান রাখার জন্য চাপ; মাঠ থেকে চাপটা বজায় রাখা।
আমি এই বিপ্লবের যে সামাজিক ভিত্তি সেই জায়গাটায় বরং আসি। এই যে, উচ্চ বিত্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেনী যারা প্রথম জীবনে শিক্ষা দীক্ষা নিয়ে এখানে আসে, এসে দেখে যে, তাদের সামনে দরজা গুলো বন্ধ। বনেদী মধ্যবিত্ত তো দেশ ছেড়েই দিয়েছেন। তাদের বাড়িঘর হয়তো দেশে আছে। কিন্তু তাদের সন্তানাাদি বিদেশে থাকেন। স্বপ্ন বিদেশে থাকে। স্বপ্ন বাড়ি যায়না। স্বপ্ন বিদেশে যায়। স্বপ্ন প্রবাসে যায়, আমেরিকা যায়। এবং শেষ জীবনে তারা নাতি নাতনীর সঙ্গেও থাকতে চায় নানান কারণে। আমি এটা দোষ দিচ্ছিনা। ঘটনা একটা ঘটে গেছে যে, আমাদেও ষাটের মধ্যবিত্ত, আশির মধ্যবিত্ত এক অর্থে এদেশের উপর তার যে সেলফ ইমেজ এক সময় ছিল যে, তারাই বুদ্ধিজীবি, তারাই নেতা। তারা যেটা বলবে সেটাই বাংলাদেশ। সে জায়গাটা তারা হারিয়ে ফেলেছে। হারিয়ে ফেলেছেন কারণ, তারা এই দুই হাজার আট নয়ে তারা যে, তাদের নেতারা যে মাইনাস টু বাস্তবায়ন করতে যেয়ে যে ফেল করেছে তারপরে আর তারা তাদের কোনো হিস্যা, তাদেও কোনো দাবী তাদের কোনো এজেন্সি এ দেশে আর থাকেনি। তাদেও রাজনৈতিক এজেন্সি থাকেনি। তাদেও কথা কেউ শুনতে চায়না। যেকারণে মাইনাস টু জরুরি অবস্থায় এনেছিলেন যার পরিণতিতে আজকে এই আমরা এই পনেরো বছর ভুগলাম। ফলে, তাইলে কারা?.. এবং তারা তো এদেশে চাকরি বাকরি কিংবা আইন অধিকার নিয়ে তাদের সমস্যাও নাই। কারণ, তাদের জীবনে অতো সমস্যা হয়না। সমস্যা যাদেও, তারা এসে দেখে যে, তাদের চাকরির জায়গাটা ছাত্রলীগ খেয়ে ফেলেছে। তাদের সরকারী জায়গাটা। আর কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এই উন্নয়নের অর্থনীতি করতে পারে নাই। ফলে সরকারী চাকরি দাঁড়ানো শেষ ভরসা। যার জন্য ছোট ছোট তার বাবা মা হাড় খাটুনি করে তাদের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করতে পাঠিয়েছে। ফলে সে যখন ব্যর্থ হচ্ছে, সে তখন চাকরির দাবীতে আন্দোলন করছে। এখন অনেকে বলবেন, চাকরির দাবীটা মনে হয় খুবই সামান্য দাবী; ছোট দাবী। এই চাকরির বৈষম্য নিয়েই কিন্তু দেশভাগ হয়েছিল উনিশ শত সাতচল্লিশ সালে। যখন গ্রাম্য মফস্বল থেকে যাওয়া, পূর্ববঙ্গ থেকে যাওয়া প্রথম জেনারেশনের শিক্ষিতেরা যাদেও শেখ মুজিবুর রহমানও ছিলেন। তারা কলকাতায় গিয়ে দেখে, সমস্ত জায়গাগুলোতে জমিদার আর বাবু মশাইয়েরা দখল করে রেখেছেন। চাকরির দাবীতে আন্দোলন হলো, শেরে বাংলা, ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দীরা নানান কমিশন করলেন, দাবী দাওয়া তুললেন, কিন্তু ঐ বনেদী মধ্যবিত্ত বললো, যে, না, আমরা চাকরির বৈষম্য; মুসলমানদের চাকরি দেবনা। যেহেতু তারা পিছিয়ে আছে সেহেতু তারা পিছিয়েই থাকবে। তাদের শিক্ষার বিরুদ্ধে শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায় লিখলেন, গণ শিক্ষার বিরুদ্ধে, কারণ গনশিক্ষায় শিক্ষিত হলে কৃষকের সন্তানেরা পড়ালেখা করবে, এবং তারা এসে চ্যালেঞ্জ করবে। ঘটনাক্রমে এই যে, উঠতি মধ্যবিত্ত এবং কৃষকের সন্তান তারা মুসলমান। ফলে, না মানার ফলে যে বৈষম্য তা সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটা পাল্টা সাম্প্রদায়িক আন্দোলন হলো। কিন্তু ঐটা ছিল সাম্প্রদায়িক বৈষম্য যে, মুসলমানকে আমি জায়গা দেবোনা। এইটা ছিল সাম্প্রদায়িকতা। মুসলিমলীগের যে পাল্টা জবাব ফজলুল হকদের সোহরাওয়ার্দীর যে পাল্টা জবাব সেটা কি সাম্প্রদায়িকতা? নাকি সেটা ইনসাফ চাওয়া? সেটা বৈষম্য দূর করতে চাওয়া? কিন্তু ইতিহাস আমাদের অন্যভাবে দেখিয়েছে। তো, আপনারা এটা দেখবেন, পাবেন, বইপত্রে আছে। বদরুদ্দীন ওমরের আছে, জয়া চ্যাটার্জিও বইও আছে। তো এখন ঐ দাবীতে তারা মানলো যে, আমরা চাকরি ছাড়বো না তবু দেশ ছাড়বো। ফলে, কংগ্রেসের নেতারা দেশ ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিলো। বাঙালি মুসলমানেরা মেনে নিলো। পূর্ববঙ্গে ফিরে আসলো। পূর্ব পাকিস্তান হলো, ঐ একবার উঠতি মধ্যবিত্তের দাবী না মানার ফলে ভারত ভাগ হলো। তার মানে এই উঠতি মধ্যবিত্তের শক্তি এবং সম্ভাবনা কতদূর? পাকিস্তানে পাঞ্জাবীরা একই সমস্যা তৈরি করলো যে বাঙালীদেরকে আমরা জায়গা দেবোন, চাকরি দেবোনা। সেনাবাহিনীতে তারা বড় পদে যেতে পারবেনা। পূর্ব বাংলার কৃষক সন্তান তারা তো পাটচাষী। যে কেবল বিশ্বযুদ্ধের সময় পাটের দাম বাড়লো, সে বর্ধিত দাম দিয়ে ঘরের চালে টিন লাগালো আর ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠালো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রামের ইতিহাস আপনারা জানেন, ফলে এইখানে উল্লেখ করছিনা। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এসে দেখে পাঞ্জাবীরা জায়গা দিচ্ছেনা। যেইখান্ থেকে জাতীয়তাবাদ হলো, আন্দোলন হলো এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। ঐ আন্দোলনের নেতাদেরকে কি জাতীয় নেতা, কেউ জাতির পিতা, নানান ভঙ্গিমায় তার মানে এই উঠতি মধ্যবিত্তের বুকের ভেতরে যে বুকের জ্বালা এবং তার যে সংগঠন বানাবার দক্ষতা, সে এক সঙ্গে মিলেমিশে যেভাবে বাকি জনগণের সঙ্গে; এই যে সংগঠন পর্যন্ত যাতায়াত; এইটা তার মধ্যেকার একটা রেভ্যুলেশনের উপাদান এবং সেই জায়গা থেকে তারা স্বাধীনতা আন্দোলন পর্যন্ত হলো। আজকে কিন্তু সেই নো ভ্যাট থেকে দুই হাজার আঠারো সড়ক নিরাপদ আন্দোলন এবং আজকে যে জুলাই অগাস্টের অভ্যুত্থান ঐ একই শ্রেনী, একই ছেলেমেয়েরা, শুধু নাম আলাদা, সময় আলাদা। কিন্তু আকাঙ্খায় এক, কষ্ট এক, স্বপ্ন এক। এবং তারা নিজের দেশে তারা দ্বিতীয় শ্রেনী হিসেবে থাকতে আর চায়না। এই যে শ্রেনীগত ভিত্তি এইটা বুঝবেন, এটা কে এড্রেস করে যে রাজনীতি করবে, তাকে আবার মানুষ তাকে জাতীয় নেতা বানাবে। ঐ জাতির পিতা না, জাতির দাদা বানাবে, পীর বানাবে, নেপোলিয়নের মতো বানাবে। এই জায়গাটা যারা বুঝেছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম নেতারা না বুঝুক, পরের যুগে আন্দোলনে বুঝেছিল বলেই আজকে তারা সফল। আমি লিখেছিলাম, ভিপি নুরের পাওয়ার হাউজ, ভিপি নুরকে নিয়ে আমার কোনো উচ্ছ্বাস ছিলোনা, তাকে নিয়ে আমার সন্দেহই ছিলো, কিন্তু পাওয়ার হাউজটা হচ্ছে এই উঠতি মধ্যবিত্ত, গ্রাম, মফস্বল, ঢাকা শহরের উঠতি মধ্যবিত্ত শ্রেনী। এই শ্রেনীটাকে এখন সংগঠিত হতে হচ্ছে। হতে হবে। তাহলে এই শ্রেনীর রাজনীতিটা কি? মতাদর্শটা কি? আমরা দেখেছি সে যাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, সে জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। সে সেক্যুলারিজমের নামে একটা উগ্র সাম্প্রদায়িক মতবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। সে একটা ভুয়া দেশ ধ্বংশকারী উন্নয়নের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। সে একচেটিয়া স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। তার মানে সে এ গুলোর প্রত্যেকটাকে ভেঙ্গে ফেলেছিল। এইসব মতাদর্শ বাংলাদেশে আর টিকে নাই। এইসব মতাদর্শের নামে ডাকে ডাক দিলে কেউ আর আসবেনা। আওয়ামীলীগ যে দল, তার যে স্লোগানগুলো উন্নয়নটা এসেছে লুটপাতের জন্য। ঐটা তার মতাদর্শ না। ঐটা দেশে বিদেশে গিয়ে ধাপ্পা দেওয়া। তার মূল যে স্লোগান বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধ, বাহাত্তরের সংবিধান, অসাম্প্রদায়িকতা। এগুলো তো ষাইট দশকের স্লোগান। এগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনাতার পরে একটা স্বাধীন রাষ্ট্রে। বাঙালী জাতীয়তাবাদের জাতীয় শত্রু ছিল পাকিস্তান। তাইলে জাতীয়তাবাদ মানে? আপনার এনিমি আছে। আপনার এনিমিটা তাইলে জাতীয়তাবাদের এনিমি থেকে জাতির বাইরে? তাইলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রে বাঙালীী জাতীয়তাবাদের এনিমি কে? সেতো বলেনা ভারত রাষ্ট্র আমার এনিমি? মায়ানমার আমার এনিমি? সেতো বলেনা তো চায়না আমার এনিমি? বা পাকিস্তান? বলে, পাকিস্তান সে তো এক হাজার মাইল দূরে। সেতো আমাদের তাদের যায় আসেনা। পাকিস্তান তো বাংলাদেশে মরে ভূত হয়ে গেছে। ফলে, ঐ পেতাত্মা আওয়ামীলীগ ছাড়া পাকিস্তানী পেতাত্মা বাংলাদেশে কেউ বহন করেনি, এত কষ্ট করে। এটা তার করতে হচ্ছে, কারণ তার নিজের রাজনীতি সে হারিয়ে ফেলেছে। তার বাঙালী জাতীয়তাবাদ নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে সে প্রয়োগ করেছে। তার সাম্প্রদায়িকতা বিরোধীতা বাংলাদেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। আপনি ইউরোপে বিশ্বের ডেমোক্রেটিক পার্টি আছে; সে দল করে এই নামে। রাজনীতি করে, রাষ্ট্র চালায় সেক্যুলার, লিবারেল পুঁজিবাদী উপায়ে। তুরস্কে এটিপি পার্টি আছে সে রাজনীতি করে মুসলমান পরিচয়ে কিন্তু রাষ্ট্র চালায় হচ্ছে সেক্যুলার, লিবারেল পুঁজিবাদী উপায়ে। সে খুবই বাস্তববাদী এখানে। তো বাংলাদেশে কেউ যদি মনে করে যে আমি মুসলমান কিন্তু আমি রাষ্ট্র চালাবো সেক্যুলার, মানে অসাম্প্রদায়িক মানে বাস্তববাদী জায়গা থেকে তাইলে তার অসুবিধাটা কি? তাকে কেন আপনি নেবেন না? মানে, আপনার বাঙালী বাঙালী জাতীয়তাবাদী যে গোড়ার সমস্যা সে জাতীয়তাবাদ বঙ্কিম চন্দ্র চট্রোপাধ্যায়ের সময় থেকে ঠিক করে রেখেছে যে, আপনি এক সঙ্গে বাঙালী এবং মুসলমান হতে পারবেন না। যেনো বাঙালী হচ্ছে একটা ধর্ম। আমরা ঐ যে দ্বন্দ্ব সমাস পড়েছি না? যে দুইটা সমাসের মধ্যে মিল হয়না। কিন্তু এশিয়া থেকে হেগেলের যে দ্বন্দ্বতত্ত্ব যেটাকে মার্কস ব্যবহার করলেন। এশিয়া থেকে মাও সে তুং বিশ্বের তৃতীয় একটা তত্ত্ব দিলেন যে ইউরোপ দর্শনের ইতিহাসে একটা বিরাট কন্ট্রিবিউশন। যেটা আমরা ঐবাবে হয়তো গণ্য করিনা, কারণ মাও সে তুং তো নেতা। উনি বললেন, না, আরেকটা দ্বন্দ্ব আছে। সেটা হচ্ছে মৈত্রী দ্বন্দ্ব। যেটা দুইটা লোকের মাঝে যেমন, তোমার সঙ্গে দ্বন্দ্ব আমার অহর্নিশ। এটা প্রেমের দ্বন্দ্ব। আমাদের ভেতরকার দুইটা পার্থক্য আছে যেইটা আমরা দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে কথা বলতে বলতে মিলে যাবো। সেটা হিন্দু মুসলমানের যে দ্বন্দ্ব সেটা মৈত্রী দ্বন্দ্ব। সেটা বাংলাদেশের বাঙালী এবং পাহাড়ীদের যে দ্বন্দ্ব সেটা মৈত্রী দ্বন্দ্ব। পার্থক্য অস্বীকার করা হচ্ছেনা। মৈত্রী দ্বন্দ্ব। এটা মিমাংসা সম্ভব। কিন্তু মৌলিক দ্বন্দ্ব যেগুলো, অপরের বিনাশ ছাড়া যেমন, আওয়ামীলীগের দ্বন্দ্ব আর বাংলাদেশের দ্বন্দ্ব। একজনের বিনাশ ছাড়া আরেকজন বাঁচতে পারবেনা। আওয়ামীলীগ বাঁচবে বাংলাদেশ বাঁচবেনা। বাংলাদেশ বাঁচলে আওয়ামীলীগকে খুব বেশি বাঁচায়ে রাখা যাবেনা। এইতো? এই হচ্ছে ঘটনাগুলো। তার মানে আমরা মতাদর্শগুলো ভেঙ্গে ফেলেছি। এই ইতিহাসের পুনব্যাখ্যা আমরা মনে করি, দু হাজার চব্বিশে আমাদের শুরু। কিন্তু এই শুরুর পেছনে যে পুরনো ইতিহাসটা যদি আমরা ভেঙ্গে ফেলতে না পারি, এসব বিষয়ে কথাবার্তা না বলতে পারি, তাহলে কিন্তু আমাদের সামনের দিনগুলোতে নানারকম অন্ধকার ফিরিয়ে আসবে।
আওয়ামীলীগ ছাড়া পাকিস্তানী পেতাত্মা বাংলাদেশে কেউ বহন করেনি, এত কষ্ট করে। এটা তার করতে হচ্ছে, কারণ তার নিজের রাজনীতি সে হারিয়ে ফেলেছে। তার বাঙালী জাতীয়তাবাদ নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে সে প্রয়োগ করেছে। তার সাম্প্রদায়িকতা বিরোধীতা বাংলাদেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। আপনি ইউরোপে বিশ্বের ডেমোক্রেটিক পার্টি আছে; সে দল করে এই নামে। রাজনীতি করে, রাষ্ট্র চালায় সেক্যুলার, লিবারেল পুঁজিবাদী উপায়ে। তুরস্কে এটিপি পার্টি আছে সে রাজনীতি করে মুসলমান পরিচয়ে কিন্তু রাষ্ট্র চালায় হচ্ছে সেক্যুলার, লিবারেল পুঁজিবাদী উপায়ে। সে খুবই বাস্তববাদী এখানে। তো বাংলাদেশে কেউ যদি মনে করে যে আমি মুসলমান কিন্তু আমি রাষ্ট্র চালাবো সেক্যুলার, মানে অসাম্প্রদায়িক মানে বাস্তববাদী জায়গা থেকে তাইলে তার অসুবিধাটা কি? তাকে কেন আপনি নেবেন না? মানে, আপনার বাঙালী বাঙালী জাতীয়তাবাদী যে গোড়ার সমস্যা সে জাতীয়তাবাদ বঙ্কিম চন্দ্র চট্রোপাধ্যায়ের সময় থেকে ঠিক করে রেখেছে যে, আপনি এক সঙ্গে বাঙালী এবং মুসলমান হতে পারবেন না।
এখন উপসংহারে আসি, উঠতি মধ্যবিত্ত তারা দিকবিদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে, যারা প্ল্যাটফর্ম খুঁজে বেড়াচ্ছে, তার মতবাদ, মতাদর্শ খুঁজে বেড়াচ্ছে। এ আন্দোলন মতবাদ দিয়ে হয় নাই, কিন্তু একটা দাগ দিতে হবে, এই যে, ঈমান ও নিশান গৌতম ভদ্রের ভাষায়। তো, ঈমান আমাদের আছে, এখন নিশানটা ঠিক মতো খাড়া করতে হবে। এবং সে নিশান তো জাতীয়তাবাদে হতে পারেনা। কারণ সেটা আমরা পাড় হয়ে এসেছি। সে নিশান ধর্মবাদ হতে পারেনা। কারণ সেটা পাকিস্তানে আমরা দেখেছি। সেই নিশান আমরা পশ্চিমা ডেমোক্রেটির কায়দায় যেতে পারিনা। কারণ, সে পদ্ধতি আমরা দেখেছি। আমারেকিা যেখানে গিয়ে রাষ্ট্রের রেজিম চেঞ্জ করেছে যে যে জায়গায় সে রাষ্ট্রগুলোতে পুননির্মান করতে পারেনি। ইরাকে পারেনি, আফগানিস্তানে পারেনি সিরিয়ায় পারেনি। কিন্তু ভিয়েতনামে দেখেন, ভিয়েতনাম ঠিকই আমেরিকার সাথে ব্যবসা করছে। কারণ তার ভেতরটা সংগঠিত আছে। ফলে, যে রাষ্ট্র নিজের ভেতরে শক্তিশালীভাবে সংগঠিত এবং তার লক্ষ্য পরিস্কার মানে ঈমান ও নিশান পরিস্কার সে আমেরিকা, ভারত, চায়না, রাশিয়া সবার সঙ্গে লেনদেন করতে পারবে। তার এখানে ভয় নাই। ফলে আমাদের রাস্তা হচ্ছে ভিয়েতনামের রাস্তা। আমরা আমেরিকার সাথে ডিল করবো, আমরা চায়নার সাথে ডিল করবো। ভারত যদি নাকে খত দিয়ে আসে ডিল করবো। ফলে, আমাকে তো ডিল করতে হবে। আমি তো অনন্ত শত্রুতার মধ্যে চলাচল করতে পারিনা। এবং ঐ ডিল করার ক্ষেত্রে আমাদের আরেকটা পলিসি আসতে হবে যেটা হচ্ছে, ইতিমধ্যে আমাদের মধ্যে আছে। আমাদের এক কবি আছে। আপনি বলতে পারবেন হয়তো, কবিতার বইয়ের নাম হচ্ছে যে, বাতের ভূগোল। নামটা আমার কাছে খুব পছন্দ হয়েছে। যারা ভাত খায়। ভাতের ভূগোলের বাসিন্দা কারা? বাংলাদেশ, মায়ানমার, ইন্দো-চায়না, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস থেকে জাপান পর্যন্ত। এই পুরা বেল্টের মানুষ ভাত খায়, ধান উৎপাদন করে, এদের অর্থনীতি, সমাজের গঠন কাছাকাছি রকমের। এরা আপনার ন্যাচারাল অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক এবং সামাজিক সহযোগী। আপনি যদি এশিয়ান হাইওয়ে করেন তাহলে এসব দেশে করবো। আমি ট্রানজিট কেন করবো ভারতের জন্য? আমি প্রয়োজনে কুমবিঙয়ে যাবো সস্তা প্লেনে করে। ওখানে বাংলা ড্রোন বানানো হবে। চীন বুঝতে পারলেই বানাবে। ব্যবসার ধান্ধা তো সবারই আছে। বাংলাদেশের লোকেরা ওখানে হোটেল, রেস্টেুরেন্ট চালাবে, বাংলাদেশীরা গিয়ে ওখানে ডাক্তার, বিনোদন কেনাকাটা করবে। কাছে, যদি ভারত মনে করে যে, তাদের দেশে আমাদের দেবেনা। মানে তাদের চিকিৎসার জন্য দুইটা খোঁটা দেবে। আমাদের জন্য সব পথ খোলা বাংলাদেশের জন্য। কারণ, বাংলাদেশের মানুষ হচ্ছে এই যে, আটকিয়ে রাখা হয়েছিল পনেরো বছর, এই আটকানো ছিল ডেমোক্রেটের… আটকায়া রাখা। যেটা ছিল আমাদেও সম্পদ তাকে বেকারত্বে এবং তাকে (কিশোর গ্যাং বলা হয়েছে) মাদকে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। নানান কিছু করা হয়েছে। এই কিশোর গ্যাং তো বড় নেতাদের ছোট অনুসারী। তারা কিশোর গ্যাং। আমার কিশোর সন্তানকে পর্যন্ত করাপ্ট করেছে। এইরকম পিশাচ তারা। তো, সেইটা যখন মুক্ত হয়ে যাবে। তো আমার .. তাইলে এখন আমাদের এই বাস্তববাদী রূপ রেখাগুলো লাগবে। যেমন, সংবিধানের প্রশ্নটা এসেছে, এটা বলে আমি শেষ করি।
আমরা একটা সুন্দর সংবিধান তৈরি করা, ড. কামাল হোসেনের মতো ঘরে বসে লেখা যেতেই পারে ভারতের সংবিধান অনুকরণ করে। কিন্তু সেই সংবিধানতো ঐ সরকারই বাহাত্তরের সংবিধান চুয়াত্তরে বাতিল করে দিলো বাকশাল করে। কারনটা হচ্ছে, আমি এটা দোষ দিচ্ছিনা, ভাল মন্দ বিচার করছিনা যে, ঐটা ভাল করছে, ঐটা খারাপ করছে। কথা হচ্ছে, ভাল সংবিধান ভালভাবে লিখলে হয়না। বাস্তবতা অনুযায়ী লিখতে হয়। আপনার দেশে যে কন্ডিশন, যে পর্যায়ে আছেন, ইতিহাসে, রাজনীতির, অর্থনীতির, হ্যাঁ, সে পর্যায়ে থেকে সংবিধানটা লিখতে হবে। ফলে, এটা জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া লেখা সম্ভব না। দ্বিতীয়ত, ভাল জিনিস লিখলেন কিন্তু পাহাড়া দিবে কে? এ সংবিধানের সুন্দর জিনিসকে বাস্তবায়ন করবে কে? উপদেষ্টারা তো কালকে থাকবেনা, উনারা থাকলেও কি করতে পারবে? এ দেশে বিগ পাওয়ারগুলোর ক্ষমতা এখনো রয়ে গেছে। বিগ বিজনেসের ক্ষমতা, বিগ মিডিয়ার ক্ষমতা। তাদের যে মাদক চোরাচালানের যে নেটওয়ার্ক, গতকাল একজন বললেন। সুন্দর কথা সেটা যে আওয়ামীলীগ চলে গেছে, বিএনপি এখনো আসে নাই, কিন্তু সিস্টেম চলছে। কারন, ঐ যে, সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক। যে রাস্তা হচ্ছে, রাস্তার সিন্ডিকেট, বাসস্ট্যান্ডের সিন্ডিকেট, পাড়ার সিন্ডিকেট, হসপিটালের সিন্ডিকেট, সচিবালয়ের সিন্ডিকেট: সবগুলো সিন্ডিকেট মেকানিজম অক্ষত আছে। ফলে, তারা আগের দুর্নীতি বেশি করতো চাঁদাবাজী, এখন কম করছে। ঐটাই রাষ্ট্র। ঐটাই প্রশাসন। বাকি প্রশাসন তাদের সাথে এডজাস্ট করে আছে। ফলে, এই হোল জিনিসটা আওয়ামীলীগের তৈরি করা নেটওয়ার্ক, মাদক, মাফিয়া এবং দাবাং পাপিয়া নেটওয়ার্ক, এরা আছে।
যেকোনো মাফিয়াতন্ত্রের বড় মুদ্রা হচ্ছে নারী। টাকা তারপরে নারী। কারণ সে তার নারীকে করাপ্ট করে। নারীকে বিনিময় করে এবং হারুনের ভাতের হোটেল তার বড় উদাহরণ। ফলে এক সময় গবেষকেরা এগুলো ধরে কাজ করবেন। স্তরে স্তরে কি পরিমাণ ভায়াবহ বিপর্যয় তারা ঘটিয়েছেন। দূষণ ঘটিয়েছে। আপনারা তা জানতে পারবেন। তো, সেই জিনিসটা তো রয়ে গেছে ঐটা তো ভাঙ্গা হয়নি। আপনি এটা আগে ভাঙ্গবেন না সংবিধানের যে বিতর্ক; কোথায় দোয়া থাকবে, কোথায় সুরা থাকবে, কোথায় কবিতা থাকবে, কোথায় ইসলাম থাকবে, থাকলে কতটুকু থাকবে নাকি থাকবেনা এই বিতর্ক আমাদের জন্য আগে প্রয়োজন কিনা?
আমাদের আজকে যেমন ইউনিটি আছে, আমাদের সে ইউনিটিটা খন্ড খন্ড হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে সে খন্ড খন্ডরই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ঐ যে, আমি ফরাসি বিপ্লবের উদাহরনটা দিলাম, বিপ্লবের পরে তারা খন্ড খন্ড হয়ে গেছিলো। কম্পিটিশনে নেমে পড়েছিল। কে রাষ্ট্র ক্ষমতায় একা যাবে। তাইলে এই যে, একাই ক্ষমতায় যাওয়ার একচেটিয়েপণা এটাই হচ্ছে প্রতিবিপ্লব। এটাই আওয়ামীলীগের পদ্ধতি। কেউ যদি মনে করে, বিএনপি মনে করে, আমি একাই ক্ষমতায় যাবো, আর কাউকে হিসাব করবোনা, ঐটা ইয়ে.. পদ্ধতি। আবার যদি কেউ মনে করে, জামাত বিএনপি ঠেকাও; সেই দুই হাজার ছয় আটের মতো; আমি ইতিমধ্যে তা দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশের সমাজে রাজনীতিতে মিডিয়ার আলামতগুলো খেয়াল করলে, বিএনপির ইয়ে.. ঠেকাতে গিয়ে এক সময় যে শুরু করেছে এক সময় আপনি জামাত ঠেকাতে গিয়ে আপনি বাংলাদেশকে ধ্বংশ করে দিলেন। মানে, যুদ্ধাপরাধের বিচার সবগুলো ইতিহাসটা আপনি মনে রাখেন। মনে রেখে একমত হবেন কিনা আমার সাথে। জামাত ঠোকানোর নামে আপনি স্বাধীনতাই বিসর্জন দিলেন। জামাত তো দুরের কথা আপনি জামাত ঠেকাতে গিয়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ভারতের কাছে দিয়ে দিলেন। সেটা কেমন জামাত ঠেকানো? কেমন দেশপ্রেম? আজকে জামাত ঠেকাতে গিয়ে যদি একই ভুল করে বা আবার বিএনপিকে ঠেকাতে গিয়ে যদি একই ভূল করেন…বিভাজন থাকবে, বিএনপি থাকবে, কমিউনিস্ট থাকবে, মধ্যপন্থী থাকবে কিন্তু সকলকে বাংলাদেশ হইতে হবে। বাংলাদেশে বসে ভারতপন্থী, চীনপন্থী, আমেরিকাপন্থী, রাশিয়াপন্থী হতে আপনি পারেন না। এটা গত পঞ্চাশ বছরে এটা আমরা দেখি নাই। সব সরকার কোন না কোনো দেশপন্থী ছিল। ভারতপন্থী, পাকিস্তানপন্থী, রাশিয়াপন্থী বা চায়নাপন্থী। বাংলাদেশপন্থী কবে হবেন? এই জায়গাটা যদি সব দলকে প্রশ্ন করেন সে লাইনে আসবে।
আপনার ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠন থাকবে কিন্তু তাকে প্রশ্ন করেন। আপনার টাকা, অস্ত্র বাইরে থেকে আসবে। এ তো হতে পারেনা। আমি তো সাধারণ ছাত্র, আমার টাকা এবং আমাকে অস্ত্র কে দেবে? আমি ভাল সংগঠন চালাতে চাই। ফলে ক্যাম্পাসের বাইরের যে রাজনীতি টাকা, অর্থের মদদ বন্ধ না করলে ছাত্র রাজনীতি আগের চেহারায় আসতে পারেনা আসলে। বড় বিজনেস হাউজ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে তারা যে ভাল ব্যবসা চালাচ্ছে; ভাল কোম্পানী চালাচ্ছে। মানে, কোম্পানীটা ভালভাবে চলছে, কর্মচারীদের বেতন দিচ্ছে, সেগুলোতে হাত দেওয়ার দরকার নাই। বরং সে কোম্পানীর শেয়ারগুলো আপনি জনগনের কাছে বিক্রি করে দেন। দশটা বিগ কোম্পানীর শেয়ার আপনি দশ হাজার দশ হাজার করে আপনি এক লাখ মানুষের কাছে বিক্রি করে দেন। কিনবে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তরাই। সেই টাকা পরে বিএনপিই আসুক বা আওয়ামীলীগই যদি ফেরত আসে। তাইলে অসম্ভব এই এক লক্ষ লোকের কাছে থেকে শেয়ার আর ফেরত আনতে পারবেননা। এক লক্ষ পরিবারের প্রতি দশজন করে দশ লাখ লোক এবং তাদের প্রতিবেশিরা নামবে। অসম্ভব। ফলে এইযে নিরাপদ পদ্ধতি। ব্যবসা চলবে, এই শেয়ার বিক্রির টাকা ব্যাংকে চলে যাবে। যে ব্যাংকগুলো তাদের ঋণ উদ্ধার করতে পারেনি। ব্যাংকও চলবে। ব্যাংক তো আর আমরা বন্ধ করতে পারবোনা। যতই লুটপাত হোক। তো, এগুলো বাস্তববাদী পদ্ধতিতে আমাদের আসতে হবে। আমরা এক দিনে সব করতে পারবোনা। কিন্তু কিছু কাজ গোপন চুক্তিগুলো, এই রাষ্ট্র কখনোই স্বাধীন নয় যতক্ষন আমরা কেউ কে কোথায় আমরা বান্ধা আছি। যে গোপন চুক্তিগুলো হয়েছে ঐ গোপন চুক্তিগুলো প্রকাশ করা এবং বাতিল করা। যে দল এগুলো করবেনা সে বাংলাদেশপন্থী না। যে সরকার এটা করবেনা যে উপদেষ্টা এটা করবেনা সে বাংলাদেশপন্থী না। যে উপদেষ্টা আদানীর টাকা পরিশোধের জন্য তদবির করবেন তিনি তো বাংলাদেশের উপদেষ্টা না। আদানীর চুক্তির পরিশোধের ব্যবস্থা কেন এ সরকার করবে এ প্রশ্নটা আমি এখানে রেখে যাচ্ছি।
এ চুক্তিগুলো বাতিল করতে হবে যেখানে সেখানে টাকা পরিশোধ করবে। ফলে, রাজপথের বিপ্লবী আমরা থাকবো। আলোচনার মধ্যে বিপ্লবী থাকবো। যখন প্রতিষ্ঠান চালাবো, বিশ্ববিদ্যালয় চালাবো, সেখানে আমরা বিপ্লবী চাইবোনা, তখন আমরা ভাল প্রশাসক চাইবো। আমি ভাল বক্তৃতা করি এর মানে এই না যে, আমি একটা প্রতিষ্ঠান ভাল চালাতে পারবো। আমি ভাল লিখি মানে এই না যে, ব্যাংকের সব বুঝি। অর্থনীতি আমি সব বুঝি। সেইটা আমাদের কাজ। আমরা অনেকে বলি, অমুককে ভিসি বানান, তমুককে বানান। কিন্তু আসলে সরকারের ভেতরেও এ ভাবনাটা আছে, তারা প্রাগমেটিক জায়গা থেকে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সিদ্ধান্ত নিতে দেন। ভুল হলে ধরেন। কিন্তু বেসিক জায়গা থেকে যে চারটা দাবী আমরা তুলেছিলাম, যে এই দশটা কোম্পানীর শেয়ার বিক্রি করে সেটা মানুষকে দিয়ে সেটা ব্যাংকের ঋণ উদ্ধার করা। এখানে বিদেশী গোপন চুক্তি প্রকাশ করা এবং বাতিল করা। আমাদেও পাওয়ার সেক্টরে যে তছনছ হয়ে গেছে ঐ প্রথমেই হাত দেওয়া সবার আগে এবং এইসব চুক্তি বাতিল করা। কুইক রেন্টাল মুইক রেন্টাল এবং প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করা। যতদুর করা সম্ভব। পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা। আমাদের একটা আলোচনা সভায় দেখলাম বিদেশী এক ব্যক্তি এসেছেন, তাকে বলছেন, আপনি আমাদের গণতন্ত্র, আমাদের ব্যাংক সংস্কারের টাকা দেন। ওর সঙ্গে আমাদেও আলাপ এটা না, ওর সঙ্গে আমার আলাপ, আমার দেশের লোকেরা যে দেড়শ ফ্ল্যাট কিনে রাখছে, আমাদের এক সাবেক ভুমিমন্ত্রী, এইটা উদ্ধারে আমাদের সাহায্য করেন। এই দাবী করলে তারা করবে, তারা যে করবেনা তা না। কিন্তু এই যে প্রপার আইডিয়া বা প্রপার এপ্রোচটা আমরা নিতে পারিনা; অনেক সময় সে বুদ্ধি কিংবা সে নৈতিক সাহসও আমাদের থাকেনা। অনেক সময় জনসমর্থনের ভয় থেকেও করিনা। মনে, জনসমর্থন নাই হয়ে যাবে। তাইলে জনসমর্থন আমরা দিই। এবং এই মতবাদিক বিতর্কে আগামী কিছুদিন আমরা না যাই। আমরা রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ; আমরা সমাজ সংস্কারের কাজ; আমরা এই পনেরো বছরে সমাজ নামক রাষ্ট্র মৃত ছিল। এই সমাজ কাউকে চিনতো না, একজনের বিপদে আরেকজন যেতোনা। রাতে টাকা পাহাড়া দিতে গিয়ে আর ত্রান দিতে গিয়ে যে অভাবিত মানবিক জাগরণ হয়েছে। যেটা আসলে সেই রাজপথে, যে মা তার সন্তানকে নিয়ে এসেছে শেষ দিনের পাঁচই অগাস্ট আমার জীবনের আমি অনেক আন্দোলন ; ফুলবাড়িতে গুলি হয়েছে। আমার পাশে মানুষ মারা গেছে ফুলবাড়ি গণঅভ্যুত্থানে। কিন্তু আমি ঐদিন তো তৈরি হয়ে যাই নাই আমি মারা যাবো। কেউ ভাবে নাই। পাঁচ আগস্টে ঢাকার বহু মানুষ, বয়স্ক মানুষ, তরুণ মানুষ এটা করেছে। তো এইটা, এই সুযোগে যদি আমরা হাতছাড়া করি, এই মৃত্যুগুলোর সাথে যদি আমরা বেঈমানি করি। এটা আমরা করবো, কেন করবো? এটা আমাদেও খাসলত। যখন আপনি একটা আনন্দেও মধ্যে থাকবেন, একটা দৌড়ের মধ্যে থাকবেন, তখন আপনি অলস হবেন তখন আপনার মধ্যে শয়তানী জাগবে। আমি দেখতে পাচ্ছি, এখানে, খন্ড খন্ড মানে ফ্রাগমেন্টেশন শুরু হয়ে গেছে। যার যার ব্যক্তিগত দূর্বৃত্তে লক্ষ্য ঠিক করছে এবং কে কার থেকে বেশি আগে গিয়ে পদ বা দখল বা রাজনৈতিক ক্ষমতা নিতে পারি সে প্রতিযোগিতা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এই লক্ষণটা ষ্পষ্ট। আজকে আমি আবার সমকালে কলামেও লিখেছি যে, বিপ্লবীরা ঘুমাবেন না, বিভক্ত হবেন না। কারণ খন্ড খন্ড কর্ম শুরু হয়ে গেছে। কারণ নেপোলিয়ন হওয়ার বাসনা কারো কারো মধ্যে জেগে বসে গেছে। এই লক্ষণগুলো এই আলামতগুলো ষ্পষ্ট। এই বিপ্লব যেটা সেটার পাহাড়াদার আপনারাই। এটা বাংলাদেশপন্থী, এটা উঠতি মধ্যবিত্তের এবং এটা পরের বাংলাদেশ। আমার বন্ধু এবং আমার অনেক বিষয়েরই শিক্ষক ফাইয়েজুর আহমেদ তিনি বলছিলেন, যে এসএমই বিকশিত হওয়া আর মধ্যবিত্ত বিকশিত হওয়া একই জিনিস। আপনার দেশে যখন মধ্যবিত্ত বিকশিত ছিল তখন আপনার সমাজটা ভাল লাগতো। কারণ গানবাজনাগুলোকে মনে হতো আমাদের মনের কথা। আজকে যখন লুম্পেনরা আর্ট মিডিয়া দখল করে ফেলেছে। যখন নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জায়গা নাই তখন শিল্প সাহিত্য আর হচ্ছেনা। তো এসএমই মানে মধ্যবিত্তকে একটা ইকোনোমি ভিত্তি দেওয়া। যে মধ্যবিত্ত একটা বড় কোম্পানীর একটা এসএমই একশো বা দুইশো লোককে কর্মসংস্থান করে হয়তো দশ কোটি টাকা, দুই কোটি টাকার বিজনেস চালায় সে কিন্তু আইনের শাসন চায়। কারণ সে একা একশো কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে নিজের পক্ষে কোন আইন বাগায়ে নিতে পারবেনা। ফলে সে আইনের শাসন চায়। সে তখন বড়লোকদের আইন ভঙ্গের বিরুদ্ধে মাঠে কাজ করবে। সেও একটা ঋণ করবে। সমাজে এসএমই যতো বাড়বে মধ্যবিত্তের জায়গা ততো বাড়বে। শিল্পী সাংবাদিক হিসেবে কিংবা ব্যক্তি হিসেবে, মানুষ হিসেবে আমাদের অধিকার পাবে। যে আমাদের শিল্পীরা আছেন, অধ্যাপকেরা আছেন যখন তিনি কথা বলতে সাহস পাবেন। কারণ আওয়ামীলীগের একচেটিয়া জিনিসটা আর নাই। কথা বললে একা ধরে নিয়ে গিয়ে যাবে; বাকিরা একা চুপ করে থাকবেনা তখন। ফলে, আমাদের যেকোনো মূল্যে ডেমোক্রেসি, গণতন্ত্র, এই গণ অধিকারের পরীক্ষায় সে পরীক্ষায় মতবাদ, পরিচয় এগুলোর চাইতে দেশটাকে বড় করা, মানুষকে মানুষের দায়িত্ব নেওয়া। বাংলাদেশ যদি একটা ভাল প্রশাসন, ভাল রাজনীতি উপহার দেয়। পুরা উপমহাদেশ, অনেক দেশ আমাদের সঙ্গে আসবে। আহমদ ছফা অনেক আগে একটা কথা বলেছিলেন, যদি একটা ভাল প্রশাসন বানাতো, তাহলে আশির দশকে ত্রিপুরা, আসাম এদিকে চলে আসতো। কিন্তু বিষয়টা এই না যে, আমরা আরেকটা দেশ দখল করবো। বিষয়টা এই তখন আমরা এসব দেশের সঙ্গে সত্যি সত্যি একটা সাব কন্টিনেন্টের জায়গায় যেতে পারবো। কারণ, আমি মুক্ত হলে, তখন আমি আরেকজনকে মুক্ত করতে পারবো। ফলে, আমার মুক্তির সঙ্গে আরেকজনের মুক্তির সঙ্গেও সম্পর্কিত। আমার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা এ দেশের মানুষ শেষ পর্যন্ত মধ্যপন্থী। এখানে তালেবান হবেনা, এখানে সিরাজ সিকদারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেও বলছি, এটা কখনো ঐ মাওবাদী লাইন বা ঐ জাতীয় এক্সট্রিম লাইন কখনো জিতবেনা। এখানে আমরা গায়ে গায়ে চলাচল করি, একজনের গায়ের সঙ্গে আরেক জনের গা ঠেকে যায়। একটা ঘুষি মারার জন্যও তো একটু দুরে যাওয়া লাগে। অত দূরত্ব আমরা পাইনা। এটা একটা কৃষক সমাজের বৈশিষ্ট্য এখনও আমাদের মধ্যে আছে। এটা খুবই ভাল লক্ষণ। এই সাংস্কৃতিক পুঁজি, এই উঠতি মধ্যবিত্ত, এই বাংলাদেশ পন্থা এবং আমাদের এজমালি উন্নয়ন এই কনসেপ্ট নিয়ে যদি আগাই প্রত্যেকে দেখতে পাবেন। আপনারা মাথা খুলে গেছে, আপনার কিছু কিছু করার আছে। গ্রন্থিক কে ধন্যবাদ। আজকে আপনারা যে এসেছেন আপনাদের ধন্যবাদ। কৃতজ্ঞতা জানাই। শুভেচ্ছা। আমি একটু হয়তো বেশি সময় নিয়ে ফেললাম। কিন্তু আসলে ঐ যে কথাটা নৌ বাছাড়া ছাড়ান নাই।

কবি। লেখক। সাংবাদিক।
Leave a Reply