একজন লেখকের কাছে কোন ভাষা স্বস্তিকর? তা জানতে চাইছিলাম কবি মুজিব ইরমের কাছে। মুজিব ইরম ভাষা নিয়ে গদ্য না লিখে আমার কাছে একটা চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠি অব্যয়ের পাঠকদের জন্য হুবহু প্রকাশ করা হলো।
তালাশ তালুকদার
তালাশ তালুকদার
প্রীতিভাজনেষু
কুশল পর সমাচার এই যে, আপনার প্রস্তাবিত বিষয় নিয়া অনেক অনেক উদাহারণ সহযোগে একখানি মহা প্রবন্ধ ফাঁদিতে পারিতাম, কিন্তু মন সায় দেয় নাই। কেনো সায় দেয় নাই ইহাও আরেক বিষয় বটে। অন্য কোনো একদিন না-হয় বিস্তারিত বলা যাইবে। আপাতত আপনার প্রস্তাবিত বিষয়ের প্রতি ঈমান রাখি বলিয়াই এই পত্রখানা লিখিতে বসিয়াছি। আমি তো পত্রযুগের মানুষ। চিঠিতেই মন মজিয়া থাকে। এমত কারণেও আপনাকে পত্র লিখিতে মন চাহিতেছে। আপনাকে সাধু ভাষায় পত্রখানি লিখিতেছি। ইহারও কারণ আছে। সম্ভব হইলে সিলটী ভাষায় লিখিতাম। তাহা হইলে মনে আরাম হইতো। কিন্তু সিলটী ভাষায় লিখিতে গেলে সিলটী নাগরীতে লিখিতে হইবে। তাহাতে মুদ্র্রণ যন্ত্র শাসিত প্রকাশনায় ব্যাঘাত ঘটিবার সমূহ সম্ভাবনা রহিয়াছে। আমি শ্রীহট্টের মানুষ। সিলটী জবানে কথা কহিয়া জীবনপাত করিতেছি। যৎকিঞ্চিত যাহা লিখিতে পারিতেছি তাহাতে আঞ্চলিকতার গন্ধ লাগিয়া থাকে। এই গন্ধ বড়ো আগলাইয়া রাখিতে সচেষ্ট থাকি। কবিতা লিখিতে লিখিতে ভাবিতে থাকি কোনটা যে আঞ্চলিক আর কোনটা যে মান, দ্বন্দ্বে পড়িয়া যাই। মনে হইতে থাকে সবই আমার জন্মে পাওয়া ভাষা। ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের ভিতর মানুষেরা যে-ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করিয়া থাকে তাহাকেই এক বাংলা ভাষা বলিয়া কবুল করিয়া থাকি। মান ভাষাকে অনেকেই শুদ্ধ ভাষা বলিয়া থাকেন। শুরুতেই এই কথা কবুল করিতে চাই, এই অধম অশুদ্ধ ভাষায় জীবনপাত করিতেছে। শুদ্ধ ভাষা শিখিতে শিখিতে অশুদ্ধ ভাষার প্রেমে পড়িয়াছে। প্রেমে পড়িতে পড়িতে ভাবিয়াছে জগতে ভাষার আবার রকম ফের কোত্থেকে আসিলো? ভাষা তো ভাষাই। হাতেখড়ি হইবার পর হইতে মাস্টার মশাই শিখাইয়াছিলেন : যাহা দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ পাইয়া থাকে তাহাকেই ভাষা বলে। জন্মের পর হইতে তাহা হইলে কি আমাদের মনের ভাব মায়ের সহিত প্রকাশ পায় নাই? এর উত্তর বিছরাইতে বিছরাইতে কাতর হইয়াছি। সঠিক ইয়াদ করিতে পারিতেছি না, মনে হয় মধ্য নব্বইয়ে ‘মঙ্গলসন্ধ্যা’য় আমরা এরকম একখানি সংখ্যা প্রকাশ করিয়াছিলাম। শিরোনাম ছিলো ‘আরেকটি একুশে কি আসন্ন?’ দেশের প্রায় প্রত্যেকটি জেলার মাতৃভাষা নিয়া আমরা অনেকেই মনের ভাব প্রকাশ করিয়াছিলাম। বাংলা ভাষার এই মহান সৌন্দর্য্য আমাদেরকে বড়ো কাতর করিয়াছিলো। এখনও করিয়া থাকে। আপনাদের এই আয়োজন আবারও কাতর করিলো। পন্ডিত আর ক্বারিদের হাতে পড়িয়া বাংলা ভাষা বড়ো গরীব হইয়া যাইতেছে। তাহাকে ধনী করিবার দিন সমাগত। আসুন আমরা নানা বরণ বাংলা ভাষার সৌন্দর্য্য অবলোকন করি। আপনাদের জয় হোক।
ইতি,
মুজিব ইরম
ইংল্যান্ড
বি.দ্র : নাম্বার কাটা যাইবার ভয়ে, শিক্ষিত সমাজে বোধগম্য না-হইবার দ্বিধায় আঞ্চলিক ভাষার প্রতি মহব্বতের এই প্রেমপত্রখানি আঞ্চলিক জবানে না-লিখিয়া সাধু ভাষায়ই লিখিতে চেষ্টা করিয়াছি। ইহাতে ইজ্জত রক্ষা হইয়াছে, আঞ্চলিক জবান ধারী বাবার অনেক টাকা খরচ করিয়া শিক্ষিত হইবার মান রক্ষা পাইয়াছে। তথাপি বলিতে ইচ্ছা হইতেছে মন কি শান্তি পাইয়াছে? অধ্যাপকদের কলমের শক্তি এর উত্তর করিতে বারণ করিতেছে। আপনাদের মঙ্গল হোক।

কবি।
Leave a Reply