আমি জর্জ সরোসকে তেমন চিনতাম না।
ক’দিন আগে কিছু বেসিক ইনফরমেশন জেনেছি, হাঙ্গেরীতে জন্ম নেয়া বিশাল বড়লোক সরোস। জাতে ইহুদি। ছেলের নাম আলেক্সান্ডার সরোস। তিনিই সম্ভবত বাপের বহু কিছু এখন দেখাশোনা করেন। তিনি সম্ভবত ঢাকায়ও এসেছিলেন, শহিদুল আলমের সাথে ছবি তুলে গেছেন। তারা সভাও করেছেন নিশ্চয়।
ক্যাজুয়ালি দুয়েকবার খেয়াল করেছি, বহুদিনের পরিচিত, সিপিবির জাহিদুল ইসলাম সজীবকে ইউক্রেন যুদ্ধ বা বিশ্বব্যাপী মার্কিন হেজিমনি/সাম্রাজ্যবাদ প্রসঙ্গে জর্জ সরোসের কথা বলতে। এরকম ধারণা পেয়েছি, দুনিয়ার যাবতীয় যুদ্ধ-বিগ্রহ-সাম্রাজ্যবাদী কায়কারবারের নাটের গুরু সরোস।
সজীবের এক ‘মার্কিন অ্যাক্টিভিস্টিং’ তত্ত্ব আছে। সজীব এই তত্ত্বটি খুব ক্লিয়ার করে বলে না, তবে যতটুকু বুঝেছি: বাংলাদেশে বাম আন্দোলনকে ধীরে ধীরে এপলিটিকাল জায়গায় নেয়া (বিশেষত ছাত্র আন্দোলনকে দুর্বল করে দেয়া), ছাত্র ইউনিয়নকে দুই ভাগ করা, এমনকি জুলাই আন্দোলনকে পরিচালিত করার জন্য যে মার্কিন ডলার ঢালা হয়েছে, সেখানেও সম্ভবত মার্কিন ডিপস্টেট ও সরোসের টাকা রয়েছে। এখানে ডলার আসার চ্যানেলটা হলো শহিদুল/দৃক/পান্থপথ, এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছেন বাম ঘরানারই অ্যাক্টিভিস্টরা। এই অ্যাক্টিভিস্টরা মার্কিন ডলারের জোরেই ‘অ্যাক্টিভিস্টিং’ করেন। এই হলো ‘মার্কিন অ্যাক্টিভিস্টিং’ তত্ত্ব। আমি সজীবকে বলেছি, তথ্যপ্রমাণসহ বিষয়টি খোলাসা করতে। উত্তর পেয়েছি, পরিস্থিতি অতটা নিরাপদ না, যে সব খুলে বলা যাবে। হয়তো পরিস্থিতি অনুকূল হলে, আরও তথ্যপ্রমাণ সজীব দেবে। তখন তত্ত্বটা পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা পাবে।
সজীবের এক ‘মার্কিন অ্যাক্টিভিস্টিং’ তত্ত্ব আছে। সজীব এই তত্ত্বটি খুব ক্লিয়ার করে বলে না, তবে যতটুকু বুঝেছি: বাংলাদেশে বাম আন্দোলনকে ধীরে ধীরে এপলিটিকাল জায়গায় নেয়া (বিশেষত ছাত্র আন্দোলনকে দুর্বল করে দেয়া), ছাত্র ইউনিয়নকে দুই ভাগ করা, এমনকি জুলাই আন্দোলনকে পরিচালিত করার জন্য যে মার্কিন ডলার ঢালা হয়েছে, সেখানেও সম্ভবত মার্কিন ডিপস্টেট ও সরোসের টাকা রয়েছে। এখানে ডলার আসার চ্যানেলটা হলো শহিদুল/দৃক/পান্থপথ, এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছেন বাম ঘরানারই অ্যাক্টিভিস্টরা। এই অ্যাক্টিভিস্টরা মার্কিন ডলারের জোরেই ‘অ্যাক্টিভিস্টিং’ করেন। এই হলো ‘মার্কিন অ্যাক্টিভিস্টিং’ তত্ত্ব।
যেহেতু খুব পরিস্কার করে বলার চাইতে, নিরুপায় হয়েই, আকারে ইঙ্গিতে বলা হয়েছে, তাই তত্ত্বটি খুব জনপ্রিয় হয়েছে এমন নয়। তবে কিছু ট্র্যাকশন পেয়েছে। সজীবের মতোই চিন্তা করছেন এমন কিছু বামপন্থী, কিছু আফসোস লীগের সদস্য, এমনকি কোর আওয়ামী লীগের কেউ কেউ এই তত্ত্বটি গ্রহণ করেছেন। ডানপন্থীরা গ্রহণ করেছে সুমুদ্ভুত সরোস-শহিদুল ’এক্সিস অব এভিল‘ ধারণাটি।
শহিদুল আলম সুমুদ ফ্লোটিলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবার পরে, আলেক্সান্দার ও তার ছবিটি আবার সামনে আনেন সজীব। সম্ভবত সেখান থেকেই ছবিটি পুনর্ব্যবহার করেন আরেক সক্রিয় বামপন্থী উন্মেষ রায়। এর পরে মাহমুদা খাঁ। পরে আরো কেউ কেউ। সজীব, উন্মেষ বা মাহমুদা – প্রত্যেকেই অত্যন্ত সক্রিয় দল-করা বামপন্থী। কোনো পার্টি না করলেও লোকে আমাকেও বাম ঘরানার ধরে নেয়। এই আমরা সবাই বাম ভাইবোন। কিন্তু আমার একটু খটকা লাগে, যে এরা সম্ভবত এক ধরনের গলদের মধ্যে আছেন।
আমি একবার ক্যাজুয়ালি একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সরোসকে ট্রাম্প গালাগাল করে কেন? উত্তর পেয়েছিলাম, সরোস যুক্তরাষ্ট্রে/বিশ্বব্যাপী প্রগ্রেসিভ কারবারে/পলিটিক্সে টাকা দেয়, এজন্য। যার সাথে এই আলাপ হয়েছিল, তাকে আপনারা সবাই চেনেন। তবে নাম বলছি না, এই আলাপে নতুন ডাইমেনশন/ডিসট্র্যাকশন তৈরী হবে, যা আমি চাচ্ছি না। তবে কয়েক মাস আগে এক লাইনে একটা উত্তর পেলেও, আমার দিক থেকে বাড়তি অনুসন্ধান করা হয় নি।
উন্মেষ তার পোস্টে একটু এগিয়ে, আলেক্সান্দারের একটা সোশ্যাল মিডিয়া প্রফাইলের স্ক্রিনশট দিয়ে হাইলাইট করে দেখিয়েছেন ‘বেন্ড দ্য আর্ক জিউয়িস অ্যাকশন’ এর ফাউন্ডার চেয়ারম্যান তিনি। কেবল তাই নয়, সঙ্গে শহিদুল-আলেক্সান্দারের ছবিটি দিয়ে, পোস্টে লিখেছেন, ”সরোসের সাথে সুসম্পর্ক রেখেও গাজাতে যাওয়া যায়। কারণ ডিপ স্টেটের কার্য়ক্রম অতিশয় ডিপ হয়।“ এর আগে সজীব ওই একই ছবি ব্যবহার করে লেখে, “ঢাকার বুদ্ধিজীবী মহলে এই ছবি নিয়া কোনো রা দেখবেন না। প্রকল্পনির্ভর বুদ্ধিজীবী তো!” মানে ওই অ্যাক্টিভিস্টিং তত্ত্বরই পুনরুৎপাদন/ধারাবাহিকতা।
উন্মেষের পোস্টে প্রশ্ন করলাম, সরোস বা ছেলের সমস্যা কী? উত্তর পেলাম, তারা ডিপ স্টেট-এর পার্ট। আর তারা যা করেন তা হলো, “দেশে দেশে মানবতা, গণতন্ত্র, সুশানের নামে গোলযোগ বাঁধিয়ে নিজেদের তাঁবেদারকে ক্ষমতায় বসানো।” অর্থাৎ মার্কিন ডিপ স্টেট/স্টেট ডিপার্টমেন্ট আর সরোস আসলে একই সত্তার দুই নাম।
সজীবের পোস্টে প্রশ্ন করলাম, “সরোস বা তার ছেলে কী কী কারণে ক্ষতিকর?” উত্তরে সজীব বললো, ”আপনারা আমাদেরকে এগুলো পড়ানোর কথা ছিল।” মারাত্মক গুগলি! পড়াবো কি, নিজেই তো ভালো জানি না।
আজকেই গুগলকে অনেকগুলো কোয়েরি করলাম।
”হোয়াট ইজ রং উইথ জর্জ সরোস?”
”হোয়াই ইজ ট্রাম্প অ্যাংরি উইথ সরোস?”
”ইজ সরোস আ জায়োনিস্ট?”
”ইজ সরোস প্রো-ইস্রায়েল?”
”ইজ সরোস পার্ট অব দ্য ডিপ স্টেট?”
আর ভিজিট করলাম ‘বেন্ড দ্য আর্ক জিউয়িস অ্যাকশন’-এর ওয়েবসাইট।
ইন্টারেস্টিং অনেক তথ্য পেলাম।
আর বুঝলাম, সজীব-উন্মেষ যা বলছেন, প্রকৃত ব্যাপার ঠিক তার উল্টা।
আপনারাও এই প্রশ্নগুলো দিয়ে ট্রাই করতে পারেন। যাচাই করে নেন। তবে সরোস “পুরা ইন্টারনেট কিইনা রাখছেন” — এরকম ভাবলে ট্রাই করার দরকার নাই।
নোট ১: শহিদুল আলম ২০১৮তে গ্রেফতার হবার আগে, ঢাকায় সাইকেল চালিয়ে ঘুরতেন। তখনো বা তার আগেও, তার গলায় প্যালেস্টাইনি কিফিয়া দেখেছি।
ডিসক্লেইমার: ১। ভিসি অধ্যাপক আরেফিনের অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা শিক্ষক নেটওয়ার্ক থেকে আন্দোলন করতাম। নীল দলের বিদ্রোহী অংশ তাদের মতো আন্দোলন করেছে। আরেফিন স্যারের পরিবর্তে বিদ্রোহী গ্রুপের পক্ষ থেকে অধ্যাপক আখতারুজ্জানান ভিসি হলেন। আমাদের সাথে কয়েক মাস সম্পর্ক ভালো বা স্বাভাবিক ছিল। এদিকে পাঠশালার (দৃক) প্রোগ্রামটি নতুন ঢাবি অধিভুক্ত হয়েছে। ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিমের ইচ্ছেয় ও নতুন ভিসির অনুমোদনে আমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠশালার গভর্নিং বডির সদস্য হিসেবে কিছুকাল কাজ করেছি। সভায় কাজু বাদাম খেয়েছি, সম্ভবত সিটিং এলাউন্সও পেয়েছি। আমি দৃকের বেনিফিশিয়ারি।
ডিসক্লেইমার ২।: আমি যুক্তরাষ্ট্রের বার্ড কলেজে দেখলাম, এখান থেকে ওপেন সোসাইটি ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্ক (ওসুন) নামের একটি শক্তপোক্ত গ্লোবাল প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়। পৃথিবীর নানান দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় একটা কোলাবোরেটিভ উপায়ে একটি অনলাইন কোর্স অফার করা হয়, সদস্য ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের জন্য। হাঙ্গেরী থেকে কলম্বিয়া, কাবুল থেকে জেরুজালেম পৃথিবীর নানান দেশ ও শহরের বিশ্ববিদ্যালয় এটার সাথে যুক্ত (যার মধ্যে বাংলাদেশের ব্র্যাকও আছে)। আমিও দুয়েকবার এখানে ক্লাস নিয়েছি, বার্ড কলেজের শিক্ষক হিসেবে। এক সময়ে জানলাম, এই প্রোগ্রামে টাকা দেন জর্জ সরোস। পরে জেনেছি, সরোসের মূল প্রতিষ্ঠান হলো ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন, তারই অংশ ছিল ওপেন সোসাইটি ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্ক।
তবে সরোসের অনেক বয়স, ছেলে দায়িত্ব নেয়ার পরে, এবছর থেকে ওসুন নামের এই প্রোগাম আর থাকছে না। নতুন উপায়ে, ভিন্ন নামে একই প্রোগ্রাম চালু থাকছে, মানে বিশ্বব্যাপী বার্ডের প্রোগ্রামটি থাকছে। ওসুনের/সরোসের বেনিফিশিয়ারি আমি।
এদিকে আমি জুলাই আন্দোলনের সমর্থক। সরোস, শহিদুল, জুলাই মিলে আমি সম্ভবত সজীবের অস্পষ্ট/অবিকশিত অ্যাক্টিভিস্টিং তত্ত্বের অধীনস্ত একজন অ্যাক্টিভিস্ট। তবে সরোস ও শহিদুল থেকে সামান্য কিছু সম্মানি পেলেও, জুলাই থেকে এখনো কোনো ডলার/টাকা পাইনি।
জুলাইয়ের ডলারগুলো কার পকেটে যে গেছে!?

লেখক, শিক্ষক, অনলাইন এক্টিভিস্ট।
                                    
                                    
                                    
                                    
                
                                
                                            
                                            
Leave a Reply