যে দুটি গান থেকে অঞ্জন দত্তের ‘বেলা বোস’ ও কাঞ্চনজঙ্ঘা’

উপল বড়ুয়া

অঞ্জন দত্ত

ন্যারেটিভ লিরিক ও পাহাড়ী ঝরনাধারার মতো সুর নিয়ে বাংলা গানে পদার্পণ অঞ্জন দত্তের। নব্বইয়ের দশকে যে ক’জন কণ্ঠশিল্পীর হাত ধরে বাংলা গানের পরিবর্তন, তাদের একজন তিনি। পশ্চিমা প্রভাবিত গল্পনির্ভর লিরিক-সুর ছিল যার হাতিয়ার। তার সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা বা নেপালের পাহাড়ী সুর বৈচিত্রকে এক সঙ্গে মিলিয়ে অঞ্জন দত্ত উপহার দিয়েছেন অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান। কবীর সুমনের ‘তোমাকে চাই’, নচিকেতার ‘নীলাঞ্জনা’র মতো অঞ্জন দত্তের ‘বেলা বোস’ কিংবা ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ এখনো মুখে মুখে ফেরে কলেজ পড়ুয়া-জীবনযুদ্ধে ব্যর্থ তরুণ-তরুণীর মুখে।

অঞ্জনের গানে ‘কান্ট্রি সং-য়ের প্রভাব রয়েছে বড় অংশজুড়ে। ওয়েস্টার্ন মিউজিকের প্রতি দারুণ অনুরক্ত তিনি। স্বাভাবিকভাবে তাঁর গানেও এর প্রভাব বিস্তর। বেলা বোস— যে গানটি অঞ্জনকে খ্যাতি এনে দিয়েছে তার উৎসমূল হিসেবে বিবেচনা করা হয় শেল সিলভারস্টেইনের (shel silverstein) লিরিক ‘সিলভিয়াস মাদার’ (sylvia’s mother)। ৭০’ দশকের আমেরিকান রক ব্যান্ড ‘ডক্টর হুক অ্যান্ড দ্য মেডিসিন শো’র (Dr. Hook & the Medicine Show) প্রথম হিট ছিল গানটি। ওই সময় বিলবোর্ড টপ-চার্টে দীর্ঘদিন শীর্ষে ছিল সিলভিয়াস মাদার।

উনার আরেক বিখ্যাত গান ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’র উৎসমূল হিসেবে বিবেচনা করা হয় বব ডিলানের (Bob Dylan) ১৯৭৫ সালে রিলিজ হওয়া ‘ব্লাড অ্যান্ড দ্য ট্র্যাকস’ (Blood on the Tracks) অ্যালবামের গান ‘ইফ ইউ সি হার, সে হ্যালো’কে (If You See Her, Say hello)।

অবশ্য এই দুই গানের সঙ্গে সাদৃশ্যতার যে গুঞ্জন, তার কোনো কোনো ভিত্তি নেই। গানপ্রেমীরা আলোচনার খাতিরে এমন মন্তব্য করে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে অঞ্জন দত্ত জনসম্মুখে কখনো কিছু বলেছেন বলে আমার জানা নেই। গান দু’টির সঙ্গে সুর ও লিরিকে তেমন মিলও নেই। মিল রয়েছে ভাবে। এখানে পাঠকদদের উদ্দেশ্যে ‘সিলভিয়াস মাদার’ ও ‘ইফ ইউ সি হার, সে হ্যালো’র অনুবাদ দেওয়া হলো। সঙ্গে মূল লিরিক দু’টি পড়ারও অনুরোধ থাকল। মিল যদি খুঁজে পান, তাতেও কিছু হবে না। কারণ, ইতোমধ্যে বেলা বোস ও কাঞ্চনজঙ্ঘা জায়গা করে নিয়েছে মানুষের প্রিয় গানে।

Dr. Hook & the Medicine Show

সিলভিয়ার মা

(মূল: শেল সিলভারস্টেইন)

সিলভিয়ার মা বলছেন, সিলভিয়া ব্যস্ত
এত ব্যস্ত যে, ধরতে পারবে না ফোন
সিলভিয়ার মা বলছেন, সিলভিয়া চেষ্টা
করছে শুরু করতে এক নতুন জীবন।
সিলভিয়ার মা বলছেন, সিলভিয়া সুখি
কেন তাকে থাকতে দিচ্ছ না নির্জন?
আর অপারেটর বলছে, আরও দাও ৪০ সেন্ট
পরের তিন মিনিটের জন্য।

প্লিজ, মিসেস আভেরি, আমি তাকে একটু বলতে চাই
কেবল একটু কথা বলব
প্লিজ, মিসেস আভেরি, আমি তাকে জানাব বিদায়

সিলভিয়ার মা বলছেন, সিলভিয়া গোছাচ্ছে
সে আজ যাচ্ছে সবকিছু ছেড়ে
সিলভিয়ার মা বলছেন, সিলভিয়ার বিয়ে
বর তার গ্যালভেস্টনের চাকুরে
সিলভিয়ার মা বলছেন, প্লিজ তাকে বলো না
কোনোকিছু, কাঁদাইও না, থাকো দূরে
আর অপারেটর বলছে, আরও দাও ৪০ সেন্ট
পরের তিন মিনিটের জন্য।

প্লিজ, মিসেস আভেরি, আমি তাকে একটু বলতে চাই
কেবল একটু কথা বলব
প্লিজ, মিসেস আভেরি, আমি তাকে জানাব বিদায়

সিলভিয়ার মা বলছেন, সিলভিয়ার তাড়াহুড়া
তাকে ধরতে হচ্ছে নয়টার ট্রেন
সিলভিয়ার মা বলছেন, তোমার ছাতাটা নাও
‘সিলভি, বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ’
সিলভিয়ার মা বলছেন, ধন্যবাদ কল করার জন্য
জনাব, আপনি পরে কথা বলেন?
আর অপারেটর বলছে, আরও দাও ৪০ সেন্ট
পরের তিন মিনিটের জন্য।

প্লিজ, মিসেস আভেরি, আমি তাকে একটু বলতে চাই
কেবল একটু কথা বলব
প্লিজ, মিসেস আভেরি, আমি তাকে জানাব বিদায়
তাকে জানাবেন বিদায়
প্লিজ, তাকে বলবেন বিদায়

 

Blood on the Tracks album cover

যদি তাকে দেখো, বলিও হ্যালো

(মূল: বব ডিলান)

যদি তাকে দেখো, বলিও হ্যালো
হয়তো এখন সে তানজিয়ারে
গত বসন্তের শুরুতে গিয়েছিল চলে
শুনেছি, ভালো আছে ওখানের নীড়ে।

আমার হয়ে বলিও, ঠিক আছি আমি
যদিও সবকিছু কেমন হয়ে আছে ধীর
হয়তো সে ভাবতে পারে, ভুলে গেছি
বলিও না তাকে, ভেবে না হতে অস্থির।

আমরাও মেতেছিলাম কলহ-নিনাদে
যেমনটা হয় প্রায় প্রণয়াবদ্ধ দুই জনে
কীভাবে সে সব ছেড়ে গেল ওই রাতে
ভেবে এখনো শিহরিত হই আনমনে।

এবং যদিও আমাদের ঘটেছে বিচ্ছেদ
তবু তা বিদ্ধ করে আমার হৃদপিণ্ড
এখনো আমার ভেতরে তার বসবাস
আমাদের কখনো হয়নি পৃথক পালঙ্ক।

যদি তুমি যাও তার খুব কাছাকাছি
আমার হয়ে তাকে এক চুমু দিও গালে
সব সময় আমি, তাকে জানাই সম্মান
সে যা করছে ও করেছিল মুক্তির ছলে।

ওহ্, যা-কিছুতে সে সুখি হোক
দাঁড়াব না আমি পথ আগলে
যদিও সেই রাত থেকে তিক্ত জিহ্বা
তাকে ধরে রাখার চেষ্টা যায়নি ভুলে।

অনেক মানুষ দেখি আমি
বৃত্তাকারে ঘুরি ফিরি প্রায়
শহর থেকে শহরে দৌড়ে
শুধু তার নাম শুনি, যেখানে যাই।

কোনোকিছুতে কখনও হইনি অভ্যস্ত
শিখেছি কিভাবে দাঁড়াতে হয় ঘুরে
হয়তো বা আমি খুব আবেগী
নয়তো বা খুব ঝুরঝুরে।

সূর্যাস্ত, হলদে চাঁদ
পূর্বে তোমাকে দিয়েছি উত্তর
এই হৃদয়ে জেনেছি প্রতিটি দৃশ্য
তারা সব মুছে গিয়েছিল দ্রুততর।

যদি এই পথ সে ফের যায় মাড়িয়ে
আমি তো তাকে খুঁজি নাই বহুদিন
বলো তাকে, সে দেখতে পাবে আমাকে
যদি তার ঘড়িতে থাকে সময়ের ঋণ।

ভাষান্তর: উপল বড়ুয়া


উপল বড়ুয়া
কবি ও অনুবাদক।

মডার্ন টাইমস মুভিতে কাদের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়েছে? 

ওমর আলীর কয়েকটা কবিতা

Leave a Reply