সরকার আমিনের কবিতা

কালো

দুই হাতে চাঁদ ধরে লটকে থাকতে গিয়ে
বহুবার হারিয়ে গেছি
কে আমায় এমন করুণ সুরে ডেকেছিল!
পেছনে তাকিয়ে দেখি নেই, হাওয়া!

‘একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি’শেষে ফিরেও এসেছি
দেখি উঠোনে কালো গাভি
জন্ম নিয়েই দৌড়াচ্ছে বাছুর
পড়ে যাচ্ছে সে রক্তাক্ত, দৌড়াচ্ছে তবুও,
আবার আবার! আবার!
এমন মর্ম, এমনি সেই মর্মান্তিক রটনা!

বহু দণ্ড পেয়েছি অকারণে! বিচারক ঘুমিয়ে গেলে
ছাড়া পেয়েছি কাসিমপুর থেকে

জেনেছি,আগুনে
হাত দিতে নেই
তবুও আগুন বেসেছি ভালো
পুড়ে গিয়ে হয়েছি কালো
পুড়ে গিয়ে হয়েছি আলো

 

বিশ্বস্ত খুনি

তোমাদের বাড়ি থেকে আমাদের বাড়ি বহুদূরে নয়
মাঝখানে একটা মাত্র পাহাড়
মাঝখানে একটা মাত্র সমুদ্র
আমরা প্রতিবেশি
পরস্পরের নিশ্বাস ফলো করি

তোমাদের মুরগি এসে
আমাদের উঠানের ঘাস নষ্ট করে দিয়ে যায়
মারি না, আমরা হুস হুস শব্দে কেবল তাড়াই
ঝগড়া হলে গভীর রাতে হাত বাড়াই
তোমাদের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনি

আমরা তোমাদের
তোমরা আমাদের
বিশ্বস্ত খুনি!

 

শেষরাতের ট্রেন চিরদিনের জন্য চলে যায়

হুইসেলের শব্দ বুকের ভেতর কম্পন তোলে!
ঢুলোঢুলো মন, সবকিছু ইথারের সম্পদ!
কিছুটা অপরিচিত ব্যথা, মর্মমূলে!

বৃষ্টির রাত সহসা নিভে যায়
স্মৃতির ঘরে কে করে বসত
আর শিস মারে স্তব্ধ সন্ধ্যায়!

কে ডেকে যায়, আমিন! আমিন!
জানি দেখা হবে সৃষ্টি ও বিনাশের পর
সবকিছুর আগে বা পর–স্মৃতিহীন!

 

প্রেমতত্ত্ব

কেঁদেকেটে বুক ভাসালেও প্রেম হয় না
প্রেমের জন্য প্রয়োজন নেই হুমকি-ধমকির
কলার ধরে দুই চাইরটা কিলঘুষি কাজে আসে না
গভীররাতে, ছাদের কিনারে গিয়ে লাফিয়ে পড়লেও,
প্রেমে পাওয়া যায় না
স্বর্গে যাওয়া যায় কি না জানিনা, তবে মর্গে যাওয়া যায়!

তুমি কীভাবে প্রেম পাবে?
যখন সবকিছু হারাতে রাজি থাকবে!

 

পথ থেকে না, পথের কাঁটা থেকে শিখি!

হেঁটে যাই একা, সূর্য ডুবছে,
জলে পড়েছে মৃদু আলো!
বলি, যে বেদনা আমার একার
সে অনেক ভালো!

মেনে নেই মনে নেই
মনে নেই মেনে নেই
নিজের সাথে নিজের
খেলা!
সন্ধ্যে বেলা, আগেবাগেই!

তুমি আছ তাই করি না ভয়
ঘুমিয়ে গেলে ডেকে তুলে দেবে নিশ্চয়!
স্টেশনে ট্রেন আসার আগেই!

 

কেন বাজারে যেতে নেই

বাজারে খাসির কলিজা ঝুলে থাকে
ঝুলে থাকে বনমোরগের গিলা
আর আছে নানান তরিকা
আমিন, বাজারে কী কাজ তোমার!

তুমি হেঁটে যাবে গোপাট ধরে
দুইপাশে শরিষার ক্ষেত
আকাশ নেমে গেছে অষ্টগ্রাম জুড়ে
তুমি দাঁড়াবে হেলান দিয়ে গোধূলিতে

দুঃখ মুছে দেবে দুঃখ
সুখের জন্য ছটফট করা গোনাহ
যে গাছ তোমাকে অক্সিজেন দিচ্ছে
ভেবে দেখো, সে একদম অভিযোগহীন!

আমিন, বাজারে যেয়ো না
বাজারে লেগে আছে রঙের আগুন!

 

ঘোড়া হাসে

কিছু বই কিনি, জানি পড়া হবে না
কিছু মানুষ চিনি, জানি পড়া হবে না
শব্দ করে ওই দূরে ট্রেন চলে যায়
বৃষ্টির ভেতর কি হঠাৎ উঠবে রোদ?
বুকের ভেতর কান্নার মতো বারুদ

তুমি হয়তো ভুলে যেতে পারো গ্রামার
তাই বলে কী ভাষা থাকে না!
হয়তো জলের ছিটায় মুছে যায় চোখের তন্দ্রা
তাই বলে কি শেষরাতের ট্রেন থেমে যায়?

ঘাটের নির্জনতম কাঠে এসে ঠোকর খায় করুণ জল
কিছু কথা বলার ছিল, বলতে পারছি না
তাই শুকিয়ে গেছে মর্মস্থল!

 

লাগেজ

সকল লাগেজ যথাস্থানে রেখে আমি সমুদ্র স্নানের জন্য তৈরি!
আসুক বৈরি আবহাওয়া
তৈরি আছি!

কী এতো হাহাকার!
বুকের ভেতর পাথর
কেন তুমি কাতর?
কী হারিয়েছে তোমার
শ্রীমতি বলেন, কী ছিল তোমার
এখন নেই? আর থাকবে না!

সব লাগেজ যথাস্থানে রেখে আমি তৈরি
আসুক বৈরি আবহাওয়া
সর্বহারার হারাবার আছে একমাত্র সমুদ্র!

 

তাঁবুতে ফেরো

–যেহেতু জেনে গেছ বড়শীতত্ত্ব
মাছ এক মিহি বাতাসের প্ররোচনায় এসেছে কূলে
কে তারে ধরতে চায় নিঁখুত তন্দ্রার ছলে!

বহু পুতুল নাচ বৃথা গেছে
সার্কাসীরা কেটে পড়েছে
ডোরাকাটা দাগ নিয়ে বহুজনে বাঘ সেজেছে
বহু বিসর্জনের পরে চাপার দাঁত নড়েছে
এখন ক্লান্তিনাশক তন্দ্রার ছলে
তাঁবুতে ফেরো!

তাঁবু এক চিচিং ফাঁক
তবু বিশ্বাসটুকু থাক!


সরকার আমিন
কবি।

১টি অ-গোপনীয় প্রেমপত্র।। মুজিব ইরম

চিরকালীন ও ক্ষণকালীন সাহিত্যের স্বরূপ

Leave a Reply