দয়িতা
এক সুসংগঠিত দলের যদি একশো’ সদস্য
তাতে দল ছেড়ে পালাতে চান দু’জন
এবং আরো একজন একই দলের ও দয়িতার
দায় কামড়ে আমরণ পড়ে থাকলেও
বাকি সাতানব্বইয়ের চক্ষুর রক্ত উপেক্ষা করেন:
উপরে লিখিত দুজনকে পালাতে বাতলে দেন পথ
আমি সে আমরণ সেই একজনের ভক্ত
যুগে যুগে রহস্যময় ঋতুর চক্র
১.
তোমার বেদনাকে তুমি ছাপিয়ে যেতে না পারো যদি
আর তোমার বেদনা তোমাকে
তবে এ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার বিপরীতে
মুখোমুখি বসো
তুমি ও তোমার বেদনা মিলে যাও পরস্পরে
যা কিছু ছুঁড়ে ফেলতে চাও
যা কিছু ধরতে চাও জড়িয়ে
তা কিছু সমান্তরালে ভাসে
লোহিতকণা থেকে পরমাণু
ফেলনা নয়
কিছুই হারিয়ে যায় না; দুর্ভেদ্য দেয়ালে
তুমি ও তোমার বেদনা ঘুরপাক খায়
তোমাদের বিযুক্তির অক্ষমতায়
পারস্পরিক প্লানেটারি নিয়মে
২
কাউকে কাউকে দেখতে ইচ্ছা করে
অনধিকার বা দূরত্বজনিত কারণে পারি না
তাদের দিনাতিপাত কর্মব্যস্ত সকাল—
আকুল করে তাদের রাত
তুড়িতে ফুরায়?
নাকি যুগে যুগে ঘোরে রহস্যময়
ঋতুর চক্র ঋণী করে?
তারা কই যায় কী বলে
মিশলো বা কার কার সাথে
ইতরসম মনে ব্যাকুলতা ভরে
ধরে আসে বুক: কুঁইকুঁই কুকুরেও চরে
মরার আগে। জ্ঞানত বিশ্বাস করি
মরে গিয়ে কবরে ঢুকলেই দেখতে পাবো
পরিস্কার দেখতে পাবো
একে একে তাদের সবাইকে
আর নিশ্চিত হবে অবিরাম নিরীক্ষাও
তারা কী করে টরে
৩
জীবনকে অন্যদের জীবনের মতোই স্বাভাবিক ভাবা স্বস্তির। যেভাবে গরু ছাগল মুরগি মৎস গাছপালা কাটায়। জন্মায় আর মরে যায়। মানুষ পৃথিবীতে তাদের সহাবস্থানে থেকে, তারাও মানুষের সহাবস্থানে থেকে জন্মায় আর মরে যায়। মানুষের তুলনামূলক যে মূল্য নিরূপণ হয়, সমসাময়িকে তার প্রভাব সক্রিয় থাকলেও কার্যত তা কৃত্রিম। জন্মায় আর মরে যায় বাদে কোনো প্রাণের কোনো বিশেষত্ব নাই
পৌনঃপুনিক
অন্ধকার নিজেই এক ব্রেইল পদ্ধতি। সুতরাং,
তাকে শেখানোর কিছু নেই অন্ধতা। বিন্দু ষষ্ঠক
কতোটা কালোতে জাগে অন্ধই বোঝে। আর বোঝে,
সিল্যাবোগ্রাম পূর্ত হতে দরকার কতো কী আলোর।
বরং চলো, তাকে নিয়ে যাব সঙ্গমখাটে। আর
মাখিয়ে দেবো আমাদের সৃষ্ট ফল প্রতিটা ভ্রুণে।
যেহেতু, বর্ণকরোজ্জ্বল বিশিষ্ট প্রাণ মাত্র বিলম্বে জানে—
সেখানে প্রায়শ আঁধার অধিকার রাখে৷
মাধ্যাকর্ষণের সহজ ভূমিকায়
যদি আলকুশির মতো ফুটে থাকি বনে
লাশ হয়ে
কম ঝক্কির হবে তাও
সিলিঙে , জনপদে, পরিবারে অলক্ষ্যে
কিন্তু বদ্ধরুমে একান্তে ফুটে থাকার চেয়ে।
ভাঙা দরজারও প্রাসঙ্গিক হয় হুড়হুড়
আকস্মিক আমার ঠিকরানো চোখে চোখ রেখে
কার্ডিওমেগালি আক্রান্ত মায়ের প্রাণের দফা হতে পারে;
বদমেজাজি বাপেরও। হতে পারে তা আমার কোমল প্রাণ তরুণ ভাইয়ের ।
যেনোবা হরেদরে ফিরে আসা
লাশোত্তর জীবনে
এড়াতে না পারা জ্যামিং
ঘিরে ধরা ঔৎসুক্যের ঠেলায়
পুনর্বার স্বস্তি খোয়াবো ।
থানা-পুলিশ
রিগর মর্টিজের আগে বাঁচোয়াহীন জেরা
উদ্দিষ্ট সরলতাকেই
সন্ধানী সামাজিক চোখের তাকিয়ে থাকা
কাটাতে পারবো না —
উৎকণ্ঠা চাপ আত্মীয় ভরপুর
ঢলে পড়লো কি না পড়লো আঁশটে দুপুর
তারও আগে কার্য ও কারণের নানান রসদ
হাতির পদক্ষেপের মতো দপদপ
আমার থেমে থাকা বুকে থামবে না।
বহুধা আইনি জটিলতা গলে
পেরিয়ে প্রশ্নকাতরতা যদি
কিছুটা উপর থেকে
(পুলিশি তদন্ত শুরু হলো সবে)
দেখি বনে ঝুলে থাকা একই আমাকে
পাতার মধ্যবর্তী ফাঁকে
অন্ধকারের আগে চতুষ্পদী
টেনে হিঁচড়ে কি খাবে আমাকে?
দাঁতের গরলে সপেও নিজেকে, প্রশ্ন মনে
ভালুক চিতা না হয়ে তারা যদি হয় শিয়াল কুকুর
ততোটাও কি সহ্য হবে?
ত্রিত্ব
১.
আমাদের যদি দেখা হয়; আমরা যদি অনেক সময় একসাথে কাটাই; আমাদের যদি পরিবেশ আত্মস্থ হয়; আমি তোমাকে একবার কিছু সময়ের জন্য জড়িয়ে ধরবো
২.
আমাদের মিলে না কিছুই তবু যেয়ো না দূরে চলে
সমানে সমান হলে রইতে কোন আকর্ষণের বলে?
৩.
তোমার নিঃস্ব জীবন তুমি আমার সাথে কাটিয়ো
জমক
যতোদূর পরিক্রম, বিশালাকায় গিলে নিচ্ছে নিঃশ্বাস।
সকল সচেতনে ধামাচাপা পড়ে নিচুগ্রাম। স্বরগ্রামের
অর্থই, শোনো, উঁচুধ্বনি—
দীর্ঘ অভিজ্ঞানে তা জেনেছি। জেব্রাক্রসিং পেরিয়ে
দেখেছি নগরীর দীর্ঘ বিলবোর্ড। তার লাস্যময়ী সুদন্তীই প্রতিরাতে সাথে করে বালিশের কাছে এসেছে
হাইওয়েতে গাড়ি নিয়ে বেরুলে দেখো,
টু-স্টোরিড ঘরগুলো আগাতে পারে না আর
বাইশতলা ভবনটি বহুদূর সাথে চলে গেছে
খতিবের মোড়ে
খতিবের মোড়ে এলে
লোকটারে দেখি— অতিকায়
সাড়ে এগারোটার রাতে
নিভে যায় দোকানপাট
কিন্তু নিভে না দুয়েক
তাদের শপ-কিপারেরা
ঢিমে আলোর রশ্মিতে
অনন্ত হিসেবে আছে?
কেনো তারা দাঁড়ায় না সে চোখ অনুসরণ করে?
ও কি গাঢ় কাজল পরে থাকে?
কাটা কাটা ব্যঙ্গ —কে জানে —দুঃখ হবে
কীভাবে একা তাকাবো সে গভীরে ?
কীসের এতো হিসেব দু’চার দোকানির?
সমান্তরালে ,কেনো তারা দাঁড়িয়ে
ছয় ফুটের কম হতেও পারতো সে লোকের চোখের রেটিনায়
পানি ঢেলে দেয় না? দৃষ্টি নরোম করে না?
কীভাবে পৌঁছুবো ঘরে
খতিবের মোড় না হয়ে
আহা, এমন অনন্ত রাত্র আমার ফুরায় না
দিনের খেয়ালে
যখন ঘুমে আছি, দূর প্রবোধের ঘুমে
তার রাত, বোধ করি, কেটে গেছে
গায়ে শাড়ি চাপিয়ে
তালুতে তালু বাজিয়ে লোক,
ভোরের দোকানে হাজির
রবিকান্ত পয়সা তোলার প্রস্তুতিতে
রুনু
অর্ধনিমীলিত দৃষ্টি বুজে যাক অথবা পূর্ণভাবে তাকাক। রুনু এই চায়। আমি আছি মাঝামাঝি। রুনু এক সুতীব্র আলো; অনেক নিষ্পেষণের পরেও ঠিকই এলায়ে পড়েছে আমার উঠানে, আমাকে অন্ধভাবে মাখাতে চেয়ে ওম। বলেছে সে, চলে এসো। টিকিট করে ফেলো কলকাতার। আমি তাকে বলতে পারিনি শুধু, আমার সামর্থ্য বড়োজোর গলির মোড়, যেখানে পথ হারানোর শংকায়, প্রেমিকাকে যে কেউ ছেড়ে যায় । অথচ কথা ছিলো রুনুর , নিরপেক্ষ যে-কোনো শহরেই রক্ষা করে নেবার প্রিয় সংগোপন । আর খণ্ডণ আমার, এখনো কুঁকড়ে যাই অন্য মুঠিতে দেখে পরিচিত হাত। সারল্য থেকে দূরে যেতে পারি না। জানি, রুনু, দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে অন্য কারো সাথে ধীরে নিবিষ্ট হয়ে যাবার। আমিও একদিন, কপর্দকশূন্য পকেটে স্বপ্ন দেখতে চাই ভারত কিনে ফেলার টাকার
কোয়াড ক্যামেরা
১.
মাছির মতো অপমান
থিক থিক করে
গ্রহাণুপুঞ্জ থেকে রাতের বারান্দা
২.
হঠাৎ আজ দিনের সাথে গতকালের মিল পাওয়া যাবে না। হঠাৎই বিগত সপ্তাহকে মনে হবে পৃথিবী থেকে অকূল গ্রহের দূরত্ব
৩.
শুয়োরের বিষ্ঠা মাটিতে মিশে মাটি হয়ে যায়। পরাক্রমশালী রাজাও। আর পৃথিবী আয়তনে আরো কিছু বেড়ে আরেকটা আলোকবর্ষ অতিক্রমের দিকে ধেয়ে যায়
৪.
একটা নক্ষত্র কোনোদিনও পৃথিবীকে দেখলো না পৃথিবী ক্ষুদ্র বলে। একটা পৃথিবীতে বিবমিষায় ভরে ওঠা হুল্লোড়ে ক্ষুদ্র নক্ষত্র লাপাত্তা হয়ে গেলো
নিমধ্যম
যখন বালক ডুব দেয় পুকুরে
পাপড়ি ও পাতার সম্মিলনে বন্ধ চোখ:
দেখে পরিচিত সূর্য দ্বিগুণ ত্রিগুণ…বহুগুণে
বিস্তৃত হয়ে আকাশ প্রায় দখল করেছে পুরোটা।
ফুসফুস ফেটে পড়ার উপক্রম নয়
তবু মুহূর্তেই লাফিয়ে পানির পৃষ্ঠদেশ ভেদে মাথা তোলে,
হা করে নিঃশ্বাস নিতে নিতে
ভুলে যেতে চায় সেই সূর্য বিরাটাকার স্ফীত;
কিন্তু সে চকিত ভয় সবার মনে বালক করে দিতে চায় সঞ্চারিত…
অল্প ফুটেছে
অনেক শিউলি ফোটার ছিলো
অল্প ফুটেছে। বাকিরা কুঁড়িতে ঝরেছে
বৈরী হাওয়ায়। নেমে গেছে উলুবনে
মুক্তো ঝরেনি—ঝরলেও কী!
দানা দানা শুভ্র মূল্য দিতো
হিমের। নিজেকে বিছায়ে
অস্থানে নয়, আত্মায় আমরণে
বিচার্য শোকের
নিবেদনে মিটিতো…

কবি
                                    
                                    
                                    
                                    
                
                                
                                
                                            
                                            
Leave a Reply